যে কারণে ক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বুয়েট ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) শিক্ষার্থীরা জাতীয় শোক দিবস পালন নিয়ে নয়, বরং রাজনৈতিক ব্যানারে আলোচনা সভার আয়োজনে ক্ষুব্ধ বলে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷

শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বুয়েটে আবারও ছাত্র রাজনীতি শুরুর চেষ্টা চলছে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের ব্যানারে  আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন এবং প্রতিবাদ জানান।

রাজনৈতিক ব্যানারে ১৫ আগস্টের কর্মসূচির আয়োজনে ক্ষোভ প্রকাশ করায় বুয়েটের শিক্ষার্থীদের 'স্বাধীনতা বিরোধী' বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টা প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজ সেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ফেসবুকে লিখেছেন, 'জাতীয় শোক দিবসে সাবেক শিক্ষার্থীদের আলোচনা সভা বন্ধ করে যারা রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছে, তারা আর যাই হোক কোনোক্রমেই সাধারণ শিক্ষার্থী না।'

কিন্তু বুয়েট শিক্ষার্থী বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি নিয়ে তারা কোনো বিরোধিতা করেননি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ছাত্রলীগের ব্যানারে তারা কোনো কর্মসূচি আয়োজন করতে পারে না। ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি পালন নিষিদ্ধ।

আগামীকাল সোমবার বুয়েট শিক্ষার্থীরা শোক দিবস পালন করবেন বলেও জানান তারা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কর্মসূচি রয়েছে। আগামী ২৯ আগস্ট পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে প্রধান অতিথি করে আলোচনা সভায় আয়োজন করা হবে বলে জানায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আসছে বুয়েট শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এসব কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে হয়নি৷

শিক্ষার্থীরাও ওই আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু এবার ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের ব্যানারে আলোচনা সভার আয়োজনে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান৷

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ এম শিহাব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের না, আমাদের সবার। ১৫ আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেছি। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের ব্যানারে আলোচনা সভার আয়োজন করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।'

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের ব্যানারে শোক দিবসের আলোচনা সভা বুয়েট অডিটোরিয়ামে করার অনুমতি নেওয়ার সময় তথ্য গোপন করেছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ।

অনুমতির আবেদনে দেখা যায়, 'বুয়েটে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী এবং ১৫ আগস্টের শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন'।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে অনুমতি চাওয়া হয়নি।

বুয়েটে আলোচনা সভার আয়োজক এবং ছাত্রলীগের নেতারা বলেছেন, 'এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না৷'

তারা বলেন, 'আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে এসেছিলাম।'

বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী ও ১৫ আগস্ট নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করতে আবেদন করায় আমরা অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে আবেদন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কর্মসূচি আমরা প্রত্যেক বছর পালন করি। এবারও আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

2h ago