জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে পুলিশ-স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত ১০

জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে পুলিশ-স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত ১০
উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। 

সংঘর্ষের সময় স্থানীয়রা পুলিশ ও প্রসাশনকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে পুলিশও পাল্টা রবার বুলেট ছোড়ে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

পুলিশ জানায়, আহত আলী রাজ হাসান (২৪) চমেকের ২৭নং সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে সলিমপুর ইউনিয়নের বায়েজিদ লিংক রোডের দুপাশের ফুটপাত, মাটির নিচে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পাইপ লাইনের ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা এবং ফুটপাত ও পাইপলাইন সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে চালায় জেলা প্রশাসন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লিংক রোডের বায়েজিদ অংশ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। পরে দুপুরের দিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সলিমপুরের পাহাড়ের শেষের অংশে থাকা আলী নগরের দিকে অগ্রসর হলে স্থানীয় নারী ও শিশুরা তাদের ঘেরাও করে এবং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর এলোপাতাড়ি ঢিল ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে অবস্থান নেয় পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিসহ চট্টগ্রামের ডিসি, র‍্যাবের পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলীনগরে গেলে সেখানে স্থানীয়রা আমাদের ওপর এলোপাথাড়ি ঢিল মারে। তারা আমাদের ঘেরাও করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে রবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।"

'এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলা ঘটনায় মামলা করা হবে,' বলেন তিনি। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাইপলাইনের ওপর ও দুইপাশে স্থাপিত শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ করতে অভিযান পরিচালিত হয়। এতে সিডিএ, সিটি করপোরেশন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।'

জেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা বলছেন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সলিমপুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে। তাই সবশেষ অবস্থা দেখতে প্রসাশনের কর্তারা সেখানে গিয়েছেন।

জঙ্গল সলিমপুরের অবস্থান সীতাকুণ্ড উপজেলার আওতায় হলেও সেখানে যেতে হয় নগরীর বায়েজিদ থানাধীন বাংলাবাজার এলাকা দিয়ে। প্রায় দুই দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলে 'চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ' নামের একটি সংগঠন। ২০১২ সালে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার।

গত ১ জুলাই জঙ্গল সলিমপুরে পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে থাকা খাস জমিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আইকনিক মসজিদ ও ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির এক গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

ওই এলাকায় মোট ৩ হাজার ১০০ একর জমির মধ্যে ৮৮ একর অবৈধ দখলদারদের হাতে আছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পাহাড় কেটে প্লট কেটে মানুষের কাছে কাগজ ছাড়া বিক্রি করে আসছিল একাধিক চক্র। দেওয়া হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগও।

সেদিন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, 'সলিমপুরে বসতি স্থাপনকারী ১৫ হাজার পরিবারকে সেখানেই পুনর্বাসন করে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।'

সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলী নগরে একটি বাহিনী গড়ে তুলে সেখানে চাঁদাবাজি, পাহাড় দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইয়াসিন নামের এক ভূমিদস্যুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২২ জুলাই সলিমপুরে অভিযান শুরু করে প্রশাসন এবং পাহাড় কাটার কাজে দুটি স্কেভেটর, ৭টি ড্রাম ট্রাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগে দুটি মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

২৪ জুলাই ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জান চৌধুরী জাবেদ জঙ্গল সলিমপুরে পরিদর্শনে যান এবং সেখানে বসবাসকারী সকল প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হবে বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি তিনি আলী নগরের শেষ প্রান্তের মসজিদ পর্যন্ত বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রেখে অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন।

পরে প্রশাসন অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করতে শুরু করে এবং টানা অভিযানে ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় ৭০০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা। 

গত ২৩ আগস্ট বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগের দাবিতে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি মোড়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ৬ ঘণ্টা অবস্থান করে সলিমপুর ও আলী নগরের বাসিন্দারা। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয়রা। পরদিন এ ঘটনায় সীতাকুন্ড থানায় ৬টি মামলা করে পুলিশ। এরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সলিমপুর ও আলী নগরে 'অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের' সরে যেতে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago