মহাসড়কে গরুবোঝাই ট্রাকে ডাকাতি করতেন তারা

ডাকাত দলের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

ফাঁকা ট্রাক নিয়ে মহাসড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল ডাকাত। গরুবোঝাই ট্রাক দেখলেই তার পিছু নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে লুট করে নেয় গরু আর নগদ টাকা। পুলিশ বলছে, এভাবেই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার শিশির মণ্ডলের গ্যাং।

সম্প্রতি নাটোর মহাসড়কে গরুবোঝাই ট্রাকে ডাকাতির ঘটনায় আসামিদের খুঁজতে গিয়ে শিশিরসহ তার ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করছে নাটোর জেলা পুলিশের টিম। এসময় নাটোর থেকে ছিনতাই হওয়া ২২টি গরু, ছিনতাই হওয়া এক লাখ টাকা এবং ২টি ট্রাক তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলান মির্জাপুর গ্রামের শিশির মণ্ডল, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কায়েমকোলা গ্রামের ফজলে রাব্বি, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চকডমর গ্রামের সেকেন্দার আলী, বাগগাড়ীপাড়ার মিন্টু ব্যাপারী, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওখাদা গ্রামের রাসেল ব্যাপারী এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের ফারুক হোসেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান।

তিনি বলেন, 'গত ২৯ আগস্ট মাঝরাতে পটুয়াখালীর কালাইহাট থেকে ১৩টি গরু কিনে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক হয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ আলী নামের এক খামারি। পথে বড়াইগ্রামের শিবপুর এলাকায় একদল ডাকাত গরুবোঝাই ট্রাককে তাদের ট্রাক দিয়ে গতিরোধ করে। এসময় ওই ব্যবসায়ী ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনদের হাত-পা বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে গরুবোঝাই ট্রাক ও নগদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।'

পরবর্তীতে গত ৫ সেপ্টেম্বর একই ধরনের আরেকটি ডাকাতি সংগঠিত হয়। এদিন মাঝরাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চিলমারী হাট থেকে ১০টি গরু কিনে একই এলাকা হয়ে টাঙ্গাইল যাচ্ছিলেন খামারি শাহিনুর ইসলাম। পথে কয়েনবাজার এলাকার ময়মনসিংহপাড়া গোরস্থানের সামনে একই কায়দায় একদল ডাকাত শাহিনুরসহ তার লোকজনকে বেঁধে গরুবোঝাই ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, 'প্রযুক্তির ব্যবহার ও মাঠপর্যায়ে নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে আসামি শনাক্ত করে প্রথম ডাকাতির ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস থেকে ছিনতাইয়ের ১ লাখ টাকাসহ ডাকাত চক্রের সদস্য ফজলে রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের লালপুর উপজেলায় চাঁনপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে সেকেন্দার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সেকেন্দারের দেওয়া তথ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতদের দলনেতা শিশির মণ্ডল এবং অন্যান্য সদস্য রাসেল ব্যাপারী, ফারুক হোসেন ও মিন্টু ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ২২টি গরু উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি এসব ঘটনায় ২টি লুণ্ঠিত ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়।

নাটোরের বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, 'শিশির মণ্ডল এই ডাকাত দলের টিম লিডার। শিশির স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার বাবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার অনেকগুলো ট্রাক এবং নিজস্ব চালক রয়েছে। গরু ডাকাতির কাজে এসব ট্রাক ব্যবহার করেন তারা। শিশিরের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় সড়ক ডাকাতির বেশ কিছু মামলা রয়েছে।'

Comments