ঢাবি-রাবি ছাড়া স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

বেশ কয়েক বছর হার্নিয়াতে ভোগার পর অসুস্থতা যখন চরমে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ সাদলি আল জাদিদ। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত অক্টোবরে হার্নিয়া অপারেশন করান তিনি।
স্বাস্থ্যবিমা

বেশ কয়েক বছর হার্নিয়াতে ভোগার পর অসুস্থতা যখন চরমে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ সাদলি আল জাদিদ। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত অক্টোবরে হার্নিয়া অপারেশন করান তিনি।

চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হলেও জাদিদের তেমন চিন্তা করতে হয়নি৷ কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে স্বাস্থ্যবিমা।

শেখ সাদলি আল জাদিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতাল থেকে ফিরে আমি বিমা শাখায় যাই ও উপযুক্ত কাগজপত্র দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা দাবি করি। এক মাস পর আমাকে ফোনে জানায় যে আমার চেক প্রস্তুত। আমি ২৫ হাজার টাকা সেখান থেকে পাই।'

'এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই স্বাস্থ্যবিমার জন্য হলেও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ,' যোগ করেন তিনি।

জাদিদের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাচ্ছেন৷ ইতোমধ্যে সুবিধাটি পেতে শুরু করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরাও।

গত বছরের অক্টোবরে প্রথম স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিমার আওতায় প্রতি বছর ভর্তির সময় এককালীন ২৭০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে বছরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বিমা সুবিধা পেয়ে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত জুনে স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা প্রকল্পের আওতায় আসে রাবি শিক্ষার্থীরাও। ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৮০ হাজার টাকা পাবেন শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুজনিত দাবি বাবদ ২ লাখ টাকা পাবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।

জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এই সুবিধা এখনো চালু করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে শিক্ষার্থীদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছুদিন আগে আমি চর্মরোগ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। ডাক্তার আমাকে কিছু পরীক্ষা দিলেও টাকার অভাবে সেগুলো আমি এখনো করাতে পারিনি। আমি যে টাকা টিউশনি করে পাই, তা নিজের খরচ মেটাতেই ব্যয় হয়ে যায়।'

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'যদি আমাদের স্বাস্থ্যবিমা থাকতো, তাহলে আমার এই অবস্থা হতো না। আমি ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারতাম।'

জাবির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী এথিনা আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে এখনো "মিনি গণরুম" আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবার ব্যাপারে প্রশাসনের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যবিমা না থাকায় অনেকে টাকার অভাবে ছোটোখাটো শারীরিক সমস্যা এড়িয়ে যান, যা পরবর্তীতে আরও বড় ও মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এটি চালু হলে শিক্ষার্থীরা তাদের শরীরের প্রতি আরও যত্নবান হবেন।'

তার প্রশ্ন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পারলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা দিতে পারবে না?'

একই দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাফিসা কবির। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছু সমস্যা হয়। আমি প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিইনি। পরে সমস্যাটা বেশ বড় হয়ে যায়।'

তার মতে, 'স্বাস্থ্যবিমা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা সমাধানে আরও আন্তরিক হতেন।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

স্বাস্থ্যবিমা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাবশ্যক বলে মন্তব্য করে তারা জানান, এই দাবি নিয়ে প্রশাসনের কাছে আগেও গেছেন এবং প্রয়োজনে আবারো যাবেন৷

ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একাংশের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিমারির ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে হলেও সব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা উচিত। স্বাস্থ্যবিমা প্রতিষ্ঠান বা সরাসরি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই সুবিধাটি দিতে পারে।'

'বিমার বার্ষিক প্রিমিয়াম যথাসম্ভব কম নির্ধারণ করতে হবে। বিমার টাকা তুলতে শিক্ষার্থীদের যেন হয়রানি হতে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।'

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনতে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছেন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাস্থ্যবিমা চালু করা প্রশাসনের জন্য কঠিন কাজ নয়। একটা বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে এই সুবিধা দেওয়া যায়। প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলে তা সম্ভব।'

তিনি আরও বলেন, 'আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নতমানের চিকিৎসাকেন্দ্র অত্যাবশ্যক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের এমন মৌলিক সুবিধা দিতেও ব্যর্থ।'

বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ অধ্যাপক ড. এ এ মামুন মনে করেন, স্বাস্থ্যবিমার আওতায় শিক্ষার্থীদের আনা হলে তারা শারীরিকভাবে তো বটেই মানসিকভাবেও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। একটা ভরসার জায়গা পাবে।

তার মতে, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা এখন সময়ের দাবি।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সন্তানরা স্বাস্থ্যবিমার আওতাভুক্ত। অন্য শিক্ষার্থীরা কেন এই সুবিধা পাবে না? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ বিষয়ে আন্তরিক হওয়া উচিত। শিগগির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষার্থীরা অনেক আগে এ রকম কিছু দাবি নিয়ে এসেছিল। আমি তা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে দিয়েছি। সেটা তার কাছে আছে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভায় আমরা দাবিগুলো তুলবো।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের এ দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই শিগগির স্বাস্থ্যবিমা চালু হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিল আফরোজা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাস্থ্যবিমা চালু করা বা না করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে। তারা প্রয়োজন মনে করলে চালু করতে পারে। এ বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের স্বাস্থ্যবিমা চালুর বিষয়ে আপত্তি নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Students back to school even as Met office extends heat alert

All primary and secondary schools, as well as colleges, reopened today after a long break that included the Eid-ul-Fitr and Pahela Baishakh holidays, and a week off due to the ongoing heatwave

5m ago