শিক্ষা

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে পিছিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সবশেষ ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২ হাজার ৩১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৬৭ জন ও ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছিলেন।

বাংলাদেশে পড়তে আসা এসব শিক্ষার্থীরা মূলত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গ্যাম্বিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মৌরিতানিয়া, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়া, রোয়ান্ডা, জিবুতি, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, সাউথ সুদান ও বাহারাইনসহ ২৬ দেশের নাগরিক।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১১ জন, বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৬ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩ জন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ৯ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৫ জন ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন।

বিদেশি শিক্ষার্থী নেই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইউজিসির প্রতিবেদনে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী

ইউজিসির প্রতিবেদনে অনুসারে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ৪১ জন, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি) ২৭ জন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) ৫১ জন, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে ৪১ জন, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২ জন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ৭ জন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ২ জন, ইউনিভাসিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ৭ জন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ৫০ জন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৫২০ জন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ১৭৯ জন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ১০ জন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ১২০ জন, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ জন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ৮৫ জন, সিটি ইউনিভার্সিটিতে ৩২ জন, প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে ২৪ জন ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জনসহ দেশের ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ৫৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন।

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। ২০২০ সালে সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ৫২০ জন। তাদের মধ্যে ৪৭৮ জন ছাত্র ও ৪২ ছাত্রী। তবে, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কিছুটা কমে গেছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে পড়ছেন, তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই সোমালিয়ান। এ ছাড়া, নাইজেরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকও আছেন।'

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী সায়েন্স ফ্যাকাল্টির বিভাগগুলোতে ভর্তি হন। বিশেষ করে, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ও ফার্মাসির মতো বিভাগগুলোতে তারা ভর্তি হন।

বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নানা কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ক্যাম্পাস হতে হয়। এর জন্য অনেক কিছুর সংযোজন করা দরকার। বিশ্বব্যাপী অনেকে দৌড়াচ্ছে, আর আমরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বহু বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সেসব আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সেখানে অনেক অনেক অর্থায়ন আছে। বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ দেয়।'

আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতো, এ কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক মনে হতো উল্লেখ করে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'এখন আমরা তাদের আর রাখি না।'

এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে বেশ কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে উল্লেখ করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, 'কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগে। সেগুলোও সহজ করতে হবে।'

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা, নিয়ম-কানুন থাকা দরকার আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করতে পারিনি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স'র পরিচালক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ছাড়া আমরা কোর্সগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করতে পারিনি। বিদেশিদের আসারও তো একটা কারণ থাকতে হবে। তবে, বাংলাদেশে মেডিকেল সায়েন্স তুলনামূলকভাবে কিছুটা সস্তা হওয়ায় অনেকে এদেশে পড়তে আসে।'

'তা ছাড়া নিয়ম-কানুন এত জটিল, ভর্তির জন্য পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। সব মিলিয়ে যথেষ্ঠ ব্যুরোক্রেটিক একটা সিস্টেম। ইউনিভার্সিটি সরাসরি ভর্তি নিতে পারে না। পাশাপাশি ফান্ড রেইজিংয়ের বিষয়েও ঘাটতি রয়ে গেছে। এর কারণ হলো আমাদের যারা পলিসি এলিট, ব্যুরোক্রাটিক এলিট, মিডিয়া এলিট, এমনকি একাডেমিক এলিট আছেন, তাদের ছেলেমেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না। ফলে এ বিষয়টি ঠিক করার আগ্রহ তাদের নেই। তাদের ছেলে-মেয়েরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না, তখন কীভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমরা আশা করি।'

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, 'বিদেশে তাদের ইউনিভার্সিটির ওপর সরকারের বিরাট বিশ্বাস রয়েছে। তারা কাউকে সিলেকশন করলে সরকার ভিসা দিয়ে দেয়। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের বিশ্বাস কম।'

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

7h ago