রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কাল থেকে

মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার মূল বিচারিক কার্যক্রম সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে। কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সাক্ষ্য প্রদানের জন্য প্রথম দিনে মামলার বাদীসহ মোট ৭ জনকে আদালতে হাজির থাকার জন্য আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছে। 

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও মামলাটির রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য জোরালোভাবে ভূমিকা পালনকারী আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এ আরএস পি এইচ)-এর চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার বৃহত্তর কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-ব্লকে তার সংস্থার কার্যালয়ে মুখোশধারী বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পরদিন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ সাড়ে ৮ মাস তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দীন ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। ৭ জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে ৩৮ জনের নাম ঠিকানা রয়েছে সাক্ষীর তালিকায়। 

আদালত শুনানী শেষে ১১ সেপ্টেম্বর ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন। আদালত ওই দিন ১১ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য। 

বর্তমানে মুহিবুল্লাহর পরিবারের ২৫ জন কানাডায় বসবাস করছেন। প্রথম দফায় ৩১ মার্চ স্ত্রীসহ ১১ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ জন ক্যাম্প থেকে কানাডা পাড়ি জমান জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্হার সহায়তায়। তবে মামলার বাদী মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিবুল্লাহ বর্তমানে কড়া নিরাপত্তায় ক্যাম্পে অবস্হান করছেন। কাল মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে তার।

হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ 

কথিত আরসার আমির বা কমান্ডার আতা উল্লাহ জুন্নুনীর নির্দেশে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয় বলে মামলার কয়েকজন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ও আতা উল্লাহর সম্পৃক্ততার বিষয় এসেছে। এর পরও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত) গাজী সালাহ উদ্দীন অভিযোগপত্রে আতা উল্লাহর নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি বলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। অথচ সাধারণ রোহিঙ্গারা সবাই জানেন আতা উল্লাহর নাম ঠিকানা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে তার ঠিকানা আছে। 

এ ছাড়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়ার আগে গত ১৬ জানুয়ারি আতা উল্লাহর ভাই মো. শাহ আলীকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে আর্মড পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তার ভাই জুন্নুনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। আতাউল্লাহর নামে উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। 

মামলার সূত্রে জানা যায়, কুতুপালং ৬ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক সি-১০ এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতওয়ালি থানার দেওয়াব বাজার জয়নাব কলোনীতে আতা উল্লাহর বসতি রয়েছে। তার বাবার নাম গোলাম মোহাম্মদ। অথচ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। 

রোহিঙ্গাদের একাধিক সূত্র ও মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ-এর দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিপুল ঘুষের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। 

তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গাজী সালাহ উদ্দীন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'ঘুষ তো দূরের কথা কারও কাছ থেকে এক কাপ চাও আমি খাইনি। আমি তদন্তে যা পেয়েছি তাই দিয়েছি।'

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আদালতে পেশ করা চার্জশিটের বিরুদ্ধে না জারি দেওয়ার এবং পূনঃতদন্তের আবেদনের সুযোগ আছে আইনে। টাকার লেনদেনের বিষয়টি জানা নেই। তবে আতা উল্লাহর নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে এবং তা সঠিক থাকলে তার বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার সুযোগ আছে।  

পিপি ফরিদুল আলম বলেন, আতাউল্লাহ এ দেশের নাগরিক নন। এখানকার পরিচয়ও নেই। এসব বিবেচনা করেই তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। তবে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন ও আতা উল্লাহর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় সেক্ষেত্রে মামলার রায়ের আগ পর্যন্ত তাকে মামলার আসামি করার সুযোগ আছে।
 

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago