অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত নোয়াখালী বিএনপি, ১৫ বছরে হয়নি সম্মেলন

রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক বিএনপির

দীর্ঘ ১৫ বছরে কোনো সম্মেলন ও কমিটি না হওয়া এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্থবির হয়ে পড়েছে নোয়াখালী জেলা বিএনপির দলীয় কার্যক্রম। বিভক্তি দেখা দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। 

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে সর্বশেষ নোয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহাজাহানকে সভাপতি, নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। 

এরপর ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রের নির্দেশ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সম্মেলনে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। সম্মেলন উদ্ভোধন করেন সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। তবে, সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হারুনুর রশিদ আজাদ ও মো. শাহজাহানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ এবং ৩ শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। ফলে সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। 

এরপর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমানকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও মাহবুব আলমগীর আলোকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ওই কমিটি বাতিল করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে হারুনুর রশিদ আজাদের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির একাংশ একাধিকবার নোয়াখালী শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। 

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পরামর্শ না নিয়ে এবং কাউন্সিল ছাড়াই প্রায় আড়াই মাস পর ২০১৭ সালে মো. শাহজাহান তার পছন্দের লোক দিয়ে একটি 'পকেট কমিটি' গঠন করে। কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসিকে জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সদর উপজেলার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক এবং শহীদুল ইসলাম কিরণকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। 

ওই কমিটিতে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আজাদকে কোনো পদে রাখা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ওই কমিটি ঘোষণার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান।'

কমিটি ঘোষণার পর হারুনুর রশিদ আজাদ এবং তার অনুসারীরা বিএনপির ওই কমিটিকে 'পকেট কমিটি' হিসেবে আখ্যায়িত করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবারও জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি জানান। 

জেলা বিএনপি ছাড়াও নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় বিএনপির একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপের নেতারা বিএনপির দলীয় ও জাতীয় দিবসে পৃথক কর্মসূচি পালন করে থাকে। 

নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী উপজেলার একাংশ) আসনে বিএনপির রাজনীতি ২ ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহিমের কাছে পরাজিত হওয়ার পর খোকন খুব বেশি আর এলাকায় যান না। তবে, মামুনুর রশিদ ২০১৪ সাল থেকে চাটখিলে নিয়মিত যাতায়াত ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিভিন্ন দিবসে এই ২ নেতার অনুসারীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করে থাকে।  

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী উপজেলার একাংশ) আসনে ২ গ্রুপে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতি। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান। এই ২ নেতার মধ্যে কোন্দল এখন চরম আকার ধারণ করছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিভিন্ন দিবসে এই ২ নেতার অনুসারীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করে থাকেন। 

সেনবাগে বিএনপির রাজনীতি ২ ভাগে বিভক্ত থাকার কথা স্বীকার করে কাজী মফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার সঙ্গে যিনি (জয়নাল আবেদীন ফারুক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি অনেক বড় মাপের নেতা। ২০১৯ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জয়নুল আবদিন ফারুক ও আমাকে নিয়ে একটি সমঝোতা করে দেন। নেতা ও দলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দল ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু জয়নুল আবদিন ফারুক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তকে অসম্মান করেছেন।' 

এই ব্যাপারে জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 
 
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ- কবিরহাট উপজেলা) আসনেও রয়েছে বিএনপির দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের স্ত্রী হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম। বিভিন্ন দিবসে এই ২ নেতার অনুসারীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করে। 

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নোয়াখালীতে ১৮৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। এর পর আর সম্মেলন হয়নি।'

জেলার ৯টি উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'প্রত্যেক উপজেলায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবুর রহমান শামীমের নেতৃত্বে সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এ নিয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না।'

কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আজাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্যাহ বুলু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আমি মিলে সর্বশেষ কমিটি গঠন করেছি। খুব শিগগিরি জেলা বিএনপির সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago