আইটি রপ্তানি আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি সেবা (আইটি) রপ্তানি খাতে গত অর্থবছরে একটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে। প্রথমবারের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা বহির্বিশ্ব থেকে সম্মিলিতভাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের স্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি আয় এর আগের বছরের তুলনায় ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৫৯২ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বিএসিসিও) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, 'বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতের ওপর ভিত্তি করেই মূলত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।'

বিপিওতে গ্রাহক পরিষেবা, ব্যাক-অফিস অপারেশন, ইমেজ প্রসেসিং, গ্রাফিক ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ডেটা এন্ট্রি, অ্যাকাউন্টিং ও আইনি প্রক্রিয়া আউটসোর্সিং এবং ডেটা বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কম্পিউটার ডেটা প্রসেসিং ও হোস্টিং সেবা রপ্তানি ১০৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতির কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে এই খাতে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আইটি কনসালটেন্সি সেবা ৩৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ১ বছর আগে ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার। সফটওয়্যার রপ্তানি ২০২০-২১ সালে ৫১ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ মিলিয়ন ডলারে।

ব্রেন স্টেশন ২৩ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবির জানান, পেমেন্ট গেটওয়ে সফটওয়্যার, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মতো প্রথাগত সফটওয়্যার ছাড়াও, ডেটা সায়েন্স সম্পর্কিত কাজের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

২০২১-২০২২ সালে কম্পিউটার ও পেরিফেরাল যন্ত্রপাতি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য রপ্তানি বিল প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানিমুখী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবীর বলেন, 'এটি অবশ্যই আমাদের শিল্পখাতের জন্য একটি ভালো লক্ষণ এবং এটি একইসঙ্গে আমাদের সক্ষমতার পরিচায়ক।'

'বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক আইটি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত, ইউরোপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ কমাতে এশিয়ার দেশগুলো থেকে সেবা কিনবে', যোগ করেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং ইউরোপীয় অঞ্চলে ১০ শতাংশ হয়েছে।

তবে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, বাংলাদেশের আইটি রপ্তানি প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে।

উদাহরণস্বরূপ, ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ভারতের সফটওয়্যার খাতে রপ্তানি আয় ছিল ১৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এমনকি টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার ও তথ্য সেবাসহ আইটি রপ্তানি থেকে পাকিস্তানের আয়ও ২০২২ সালের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, আইটি খাত থেকে প্রকৃত রপ্তানি আয় সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি বলেন, আনুমানিক বার্ষিক আইটি রপ্তানি এখন ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, অনেক প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সার তাদের পুরো টাকা দেশে আনেন না।

এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আরও অভিযোগ করেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের তুলনায় ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ার কারণে অনেক সংস্থা এবং ফ্রিল্যান্সাররা এটি ব্যবহার করেন।

গত ৭ মাসে মার্কিন ডলারের বিপরীতে অন্তত ২০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে টাকা। এর পেছনে মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ আমদানি বিল ও এর কারণে সৃষ্ট রিজার্ভ ঘাটতিকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সৈয়দ আলমাস কবির এই খাতে দক্ষ কর্মীর অভাবকেও অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

'আমাদের ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, কিন্তু তাদের প্রতি ঘণ্টায় আয়ের হার খুব কম, কারণ তারা বেশিরভাগই কম মূল্যের কাজ করেন। কিন্তু ভিয়েতনামী ও ভারতীয় ফ্রিল্যান্সাররা তাদের উচ্চতর দক্ষতার কারণে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের চেয়ে কমপক্ষে ৩ গুণ বেশি আয় করেন', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা যদি আইটি পেশাদারদের দক্ষতার উন্নয়ন করতে পারি, তবে আরও উচ্চ মূল্যের কাজ করতে সক্ষম হব।'

বিএসিসিওর সভাপতি শরীফ জানান, দক্ষতার ঘাটতি পূরণের জন্য পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন এবং শিক্ষাব্যবস্থা, সরকার ও শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা আবশ্যক।

বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন এবং আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ আইটি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে কর্মরত আছেন।

রাইসুল জানান, ২০২২ সালের তুলনায় এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধীর হবে।

'আগামী মাসগুলো চ্যালেঞ্জিং হবে এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে না', যোগ করেন তিনি।

তবে সফটওয়্যার রপ্তানি আদেশ কমবে না বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

(সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে IT exports cross half a billion-dollar mark লিংকে ক্লিক করুন)

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

6h ago