পুনঃতফসিলের পরও খেলাপি হচ্ছে ঋণ

স্টার ফাইল ছবি

ঋণ পরিশোধের জন্য খেলাপি গ্রাহকদের সময় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়। এসব করেও মন্দ ঋণ কমাতে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল করে, যার মধ্যে ছিল ঋণ থেকে দায়মুক্তির এককালীন ব্যবস্থা।

এই সুবিধার আওতায় ঋণগ্রহীতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ এককালীন পরিশোধ করে তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারতেন।

এই উদ্যোগের ফলে পুনঃতফসিল করা ঋণ বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে মোট ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়, যা একটি রেকর্ড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে, যার ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ আবারও খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।

২০২০ সালে পুনঃতফসিল করা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ শতাংশ। সে বছর ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, পুনঃতফসিলের পরও ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত।

তিনি বলেন, ইচ্ছকৃত খেলাপিদের মধ্যে এই সুবিধার অপব্যবহার করার প্রবণতা দেখা যায়।

জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ নীতিমালার শর্ত শিথিল করে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব মেয়াদী ঋণ খেলাপী হয়ে যায় তাদেরকে আগের ৯ থেকে ২৪ মাসের পরিবর্তে ৬ থেকে ৮ বছরের মধ্যে পুনঃতফসিল করা ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়।

মেয়াদী ঋণ পরিশোদের মেয়াদ ১ বছরের চেয়ে বেশি হয়। সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন শিল্প ইউনিট তৈরি অথবা বর্তমান অবকাঠামোর সম্প্রসারণ করার জন্য দেওয়া হয়।

এ ছাড়াও, ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য এখন তাদের খেলাপি হওয়া ঋণের আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে অন্তত ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা ছিল।

জুলাই মাসের আগে, মোট খেলাপি ঋণের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত এককালীন পরিশোধ করে ঋণ পুনঃতফসিল করার বাধ্যবাধকতা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপিরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ব-অনুমতি নিয়ে বাধ্যবাধকতার চেয়ে কম পরিমাণ এককালীন অর্থ পরিশোধ করে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়েছেন।

নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হওয়ার পর ইচ্ছা করে ঋণ পরিশোধ করেন না এমন ব্যক্তিরা একাধিক ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর এই ঋণ পরিশোধ করেন না, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ব্যাংকগুলো স্ট্রেস অ্যাসেট হিসেবে বিবেচনা করে, কারণ এগুলোর পুনরুদ্ধার করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক ঋণগ্রহীতা সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার পরও তারা ব্যবসা ও ঋণ পরিশোধে আন্তরিক না হওয়ায় তারা আবার খেলাপি হয়েছেন।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময় ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় কয়েকটি ব্যাংক নিয়ম ও নীতিমালা শিথিল করে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণ পুনঃতফসিল করে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

10h ago