সিলেটে ডেঙ্গুর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক

সিলেট ডেঙ্গু
সিলেট নগরীতে ফগ মেশিন দিয়ে মশা মারার ওষুধ ছড়াচ্ছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ছবি: শেখ নাসির

সিলেট সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয়ের সচেতনতামূলক প্রচারণা ও বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যেই সিলেট বিভাগে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

প্রাথমিক অবস্থায় রাজধানী ঢাকা থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সিলেটে এলেও সম্প্রতি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যে শনিবার পর্যন্ত ৪৬ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে ৮ জন সম্প্রতি সিলেটের বাইরে ঢাকা বা দেশের অন্য কোনো স্থানে যাননি।

শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫ জন রোগী যার মধ্যে রোববার হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছেন ৬ জন।

সিলেটের সিভিল সার্জন অফিসের কীটতত্ত্ববিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ধারাবাহিকভাবে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান করছি এবং যেখানেই পাচ্ছি তা ধ্বংস করছি। তবে এখনো সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক নয়। তবে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতে পারে কারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ঢাকা থেকে সিলেট আছেন।'

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নগরীতে মশা নিরোধ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।

সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা গত সেপ্টেম্বর থেকেই মাইকিংসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করেছি। পাশাপাশি এডিস মশা নির্মুলে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও মশা নিধনে নগরব্যাপী কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এডিস মশা যেহেতু ড্রেনের নোংরা পানিতে জন্মায় না, বরং বাড়িঘরের মধ্যে বা আশেপাশে পরিষ্কার পানিতে জন্মায়, তাই ঢালাওভাবে মশার ওষুধ ছড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনসচেতনতা।'

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বাড়ির আশেপাশের এলাকায় দ্রুত ও গুরুত্ব দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, 'ইতোমধ্যে পুরুষ, মহিলা ও শিশু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ব্লক নির্ধারণ করছি যাতে সব রোগীকে একই জায়গায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়। এছাড়াও তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনসহ সব ধরনের উন্নত চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে।'

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, 'আমরা এখনও করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে রয়েছি এবং এসময় ডেঙ্গুর মতো একটি মহামারির মুখোমুখি খুবই ভয়াবহ হবে। এ মহামারি রুখতে জনসচেতনতাই মূল চাবিকাঠি।'

তিনি বলেন, 'এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে। আর এজন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সব জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।'

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, 'ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের এখন পর্যন্ত যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে তা অপর্যাপ্ত ও অপরিকল্পিত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।'

'জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। নগরীর কাউন্সিলররা উদ্যোগ নিয়ে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে উপস্থিতদের মধ্যে ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

The student movement against discrimination will hold a mass gathering at Zero Point in the capital’s Gulistan today, demanding trial of the Awami League.

3h ago