ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

শ্যামনগরের ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও দমকা হওয়ার পাশাপাশি নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন থেকে ৩০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের নিরাপদে স্থানে যেতে জেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সুন্দরবনে কর্মরত জেলেদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের দৃষ্টিনন্দন এলাকায় পানি লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে। বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব বাড়তে থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলে ৭নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। আজ ভোর থেকে জেলায় মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশাশুনি ও শ্যামনগর মিলিয়ে ২৫ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় ৮৫ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ ও ১২ হাজার জিও ব্যাগ নিয়ে তাদের কর্মীরা প্রস্তুত আছে।

স্থানীয়রা জানান,  বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। বৃষ্টিও বাড়ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার জন্য। কিন্তু, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না।

আশাশুনি সদর ইউপির চেয়ারম্যান হোসেন আলী জানান, নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সঙ্গে দমকা বাতাস বইছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ যেন ভেঙে না যায় এজন্য স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান,  চুইবাড়িয়া, সোনাতনকাটি, রুয়েরবিল, চাকলা, হরিশখালি ও দৃষ্টিনন্দন  এলাকার বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। অনেক স্থানে বাঁধ সরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন এলাকার বাঁধের মাটি সরে লোকালয়ে পানি ঢুকছিল। তা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় লোকজন বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বন্ধ করেছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকায় কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাসে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা বৃদ্ধ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন।

পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুটিকাটা, চন্ডীপুর, কামালকাটি, পূর্ব ঝাপাসহ আর ৪-৫টি স্থানে বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। নদীতে আর পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-২ উপ সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, তাদের আওতায় বাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। আমরা সতর্ক আছি যেন বাঁধ না ভাঙে। প্রতাপনগরের দৃষ্টিনন্দন এলাকার বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছিল। তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সিনথেটিক ব্যাগ ও জিও ব্যাগ নিয়ে আমরা প্রস্তুত আছি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, তাদের আওতায় শ্যামনগর এলাকার ৮-১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ আছে। আমাদের কর্মী প্রস্তুত আছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, শ্যামনগরে গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকা থেকে ইতোমধ্যে ২৫-৩০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার এক স্থানের বাঁধ লিকেজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করা হয়েছে। এ ২ উপজেলায় ২৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ ৮৭টি মেডিকেল দল প্রস্তুত রেখেছে। সংগ্রহে রাখা হয়েছে খাবার, সুপেয় পানি ও স্যালাইন।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

1h ago