বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে ট্রেনে। ছবি: স্টার

রংপুর বাস মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিভাগের সবগুলো রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ট্রেনগুলোতে ভিড় বেড়েছে যাত্রীদের। 

লালমনিরহাট রেল বিভাগ থেকে চলাচলকারী লালমনিরহাট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট-রমনা, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর ও লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে আজ শুক্রবার যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। 

লালমনিরহাট শহরের কলেজ রোডের ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমি ট্রেনে করে রংপুরে গেছি। ট্রেনের কামরার ভেতর দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। ট্রেনে এত পরিমাণে যাত্রী চলাচল করছে তা বলে শেষ করা যাবে না।'

বহু কষ্টে ট্রেনে রংপুরে পৌঁছালেও আবার লালমনিরহাট ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মেরাজুল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রেনতো আর সবসময় পাওয়া যায় না। কাজ শেষ হওযার পরও আমাকে ট্রেনের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।'

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে যাত্রীরা। ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'কোনো কারণ ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় আমরা সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছি।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। তাকে চিকিৎসক দেখানো জরুরি। আজ সকাল ১০টার দিকে বাস টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। তারপর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখি ট্রেনও ছেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে দ্বিগুণ ভাড়ায় রংপুরে যেতে হয়েছে।'

'পরিবহন ধর্মঘটের জন্য আমাদের খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে', বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট রেলস্টেশনে ট্রেনযাত্রী মমিনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নিয়মিত ট্রেনে করে রংপুরে যাতায়াত করি। আজ সকালে ট্রেনে এতবেশি যাত্রী ছিল, বাধ্য হয়ে মালবাহী বগিতে উঠে রংপুরে গেছি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাসযাত্রীরা ট্রেনে চলাচল করছেন। বিনা কারণে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।'

এ বিষয়ে পরিবহন শ্রমিকরা জানান, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরে প্রতিদিন ৮০টি বাস চলাচল করে। ধর্মঘটের কারণে এসব বাস এখন টার্মিনালে রয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের ধারকর্জ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

লালমনিরহাট বাস টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিক সালামত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'প্রায় দেড় হাজার বাস শ্রমিক বৃহস্পতিবার থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কি কারণে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে সেটা শ্রমিকরাও জানেন না। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের রোজগার নেই। সংসার চালাতে অন্যের কাছে ধার করতে হচ্ছে।'

কুড়িগ্রাম বাস টার্মিনালের বাস শ্রমিক জোবেদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর বিএনপির সমাবেশে যাতে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য বাস মালিকদের চাপ দিয়ে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। কিন্তু যারা সমাবেশে অংশ নেবেন তারা বিভিন্ন উপায়ে রংপুরে চলে যাচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে, কেউ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে, আবার কেউ যাচ্ছেন ট্রেনে।'

বাসগুলো রাখা হয়েছে টার্মিনালে। ছবি: স্টার

লালমনিরহাটের বাস মালিক শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় রংপুরের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়েই সবগুলো বাস টার্মিনালে রেখেছি।'

তবে কী কারণে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লালমনিরহাট রেল স্টেশনে ট্রেন চালক মানিক মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনে বহু যাত্রী চলাচল করছে। ট্রেনের সবগুলো কামরা যাত্রীতে ভরে গেছে। এমনকি মালবাহী বগিগুলোতেও যাত্রী উঠেছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ট্রেনে এতবেশি যাত্রীর ভিড়।'

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুরে বিএনপির সমাবশে বাঁধা দিতে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সরকারের চাপে বাস মালিকরা বাধ্য হয়েই ধর্মঘট ডেকেছেন। এতে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি আরও বেশি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে নানা উপায়ে রংপুরে পৌঁছতে শুরু করেছেন। রংপুরে বিএনপির সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক একটি সমাবেশ। কল্পনার চেয়ে অধিক মানুষের উপস্থিতি ঘটবে সমাবেশে।'

  

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago