ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, প্রস্তুত জেলেরা

ভোলা সদরের শিবপুর এলাকায় জেলেরা ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: স্টার

আজ শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। আগামীকাল শনিবার ভোর থেকেই আবার ইলিশ ধরতে পারবেন জেলেরা। তাই শুরু হয়েছে ইলিশ আহরণের প্রস্তুতি। 

শুক্রবার ভোলা সদরের মেঘনা পাড়ের শিবপুর এলাকায় জেলেদের ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলেরা জাল ঠিক করছেন, পানিতে ট্রলার নামাচ্ছেন। কেউ কেউ বরফ ভাঙছেন।

তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই কেউ কেউ ইলিশ শিকারে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলে
শিবপুরের জেলেরা পানিতে ট্রলার নামাচ্ছেন। ছবি: স্টার

ভোলা সদর উপজেলার সাগর মাঝি ডেইলি স্টারকে জানান, মেঘনার শিবপুর এলাকায় অন্তত হাজারখানেক জেলে পরিবার রয়েছে। তাদের অনেকেই ২-১ দিন আগে সাগরে নেমে পড়েছেন। তবে আজ মধ্যরাত থেকে সবাই ইলিশ শিকারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নীরব মাঝি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলেদের অনেকেরই ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে অনেকেই ধার করে জাল, বরফ নিতে হচ্ছে। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা তার ওপর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।'

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগের চেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে এবারের নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদী ও সাগরে অন্তত ৭ দিন কেউ নামতে পারেনি। এছাড়া প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে টার্গেটের চেয়ে বেশি ইলিশ ডিম পাড়ছে।'

'গত বছর ডিম পাড়ার হার ছিল ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ, এবার এটা বেড়ে গিয়ে ৫৩-৫৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এর ফলে ইলিশ উৎপাদনের যে টার্গেট, ৬ লাখ মেট্রিক টন, এবার সেটা পূরণ হয়ে আরও কিছুটা বাড়তে পারে', বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, এবার অভিযান ও উদ্ধার ইতোপূর্বের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি ছিল।

চাঁদপুরের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, 'এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় অমাবস্যা ছিল। এসময় ডিম পাড়ার হার বেশী হয়ে থাকে। এসময় নদীতে তেমন ডিস্টার্ব ছিল না। এর ফলে ডিম পাড়ার হার বেশি হবে বলে মনে করছি। এখন এদের বাঁচিয়ে রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।'

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী, এ বছর নিষেধাজ্ঞার আওতায় ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলার বিভিন্ন নদ নদী অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জন জেলেকে, ২৫ কেজি করে ১৩ হাজার ৮৭২ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হচ্ছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলা ছাড়াও ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রম রয়েছে। ইলিশের নিরাপদ প্রজনন শেষে যেন পুনরায় সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা। এর আওতায় ছিল প্রায় ৭ হাজার বর্গ কি.মি এলাকা।'

তবে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন ভোলা সদর উপজেলার কয়েকজন জেলে। 

তাদের দাবি, এখনো অনেক জেলে নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছেন।

বরিশাল বিভাগীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব জেলে এখনো খাদ্য সহায়তার আওতায় আসেনি। আমরা সব জেলেকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনার দাবি জানাই।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, 'ভোলার এক লাখ ৫৭ হাজার জেলের মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago