ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য বলেছি: প্রধানমন্ত্রী

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

যুদ্ধ ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।'

আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে চুন্নু তার প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে? দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন আমি সবার কথা বলছি, তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ঐক্য শুধু মুখে বললে হবে না। নিজে থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি, কোন এলাকাটা আমাদের ভোট বেশি দিলো আর কোন এলাকা দিলো না সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি।'

'অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠ চাল দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।'

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাবো। খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা ব্যবহার করব এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে আমরা অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শুধু আমরা নই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যেন আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমন কি এলএনজি আমদানির জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।'

গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি।'

'বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া' প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের খোঁজা হয়, ধরা হয়।'

'ইতোমধ্যে অনেক পণ্য খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সবসময় সজাগ দৃষ্টি আছে। এভাবে পণ্য কোনো না কোনোভাবে লুকিয়ে রেখে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা যারা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া চলমান থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, 'বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই রিপোর্ট ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের। সিপিডি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। যে ৪২টি দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ তার একটি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার বলছেন দুর্ভিক্ষ হতে পারে সবাই যেন সাবধান হয়।'

তিনি বলেন, 'প্রথম আলোর লিড নিউজ চাল-আটা-ভুট্টার দামে রেকর্ড। খোলা আটা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩০ টাকা, সেটা এ বছর অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা। মোটা চাল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩২ টাকা, এ বছর সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। ভুট্টা ২৪ টাকা থেকে হয়েছে ৩৪.৫ টাকায়।'

পরে তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেইসব লোকের কথাই সংসদ সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এ কারণে তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এইজন্য যে তাদের একটু ভালো হয়, কদর বাড়ে সেজন্য।'

'আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোনোদিনই কোনো হিসাবেই তারা কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। তাদের এই হিসাব কখনোই সঠিক হয় না,' বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'আজকে সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশে...। বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে আমি তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দিচ্ছি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকেই ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। ভেতরে জাতি দেখুক সেটা সঠিক না। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।'

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠানতো কোনো কিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনা শাসন ছিল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।'

তিনি বলেন, 'দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে যা যা করণীয় আমরা সাধ্যমতো করে যাব। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ এবং স্যাংশনের জন্য প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কথা আমি জাতিসংঘেও বলে এসেছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে তার প্রধানকে মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা।'

'আমরা জনগণের পাশে আছি জনগণের সাথে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমার যা কাজ করার সেটা আমি করে যাব,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

1h ago