যা বললেন ‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার’ বিজয়ী শামারুহ মির্জা

পুরস্কার হাতে শামারুহ মির্জা। ছবি: সংগৃহীত

'পরিশ্রম ও সততা খুবই জরুরি। এটা থাকলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসাবিজ্ঞানী শামারুহ মির্জা। নিজের পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৩ সালের 'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ারে' ভূষিত হয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল গ্যালারিতে শামারুহ মির্জার হাতে পুরস্কার তুলে দেন গত বছরের বিজয়ী লুক ফারগুসন ও এসিটি (অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি) চিফ মিনিস্টার অ্যান্ড্রু বার।

সম্মাননা পাওয়ার পর আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় টেলিফোনে শামারুহ মির্জার সঙ্গে ডেইলি স্টারের কথা হয়।

তিনি বলেন, 'এই অর্জনটি আমার একার নয়, সংগঠনের সবার। এই অর্জনের মানে হলো, দায়িত্ব আরও বেড়েছে। আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে, আরও পরিশ্রম করতে হবে, যাতে আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি।'

অর্জনটি বাংলাদেশেরও উল্লেখ এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী বলেন, 'যেকোনো বাংলাদেশি যখন বড় কিছু অর্জন করেন, আমার প্রচণ্ড ভালো লাগে, অনুপ্রেরণা পাই। আমার এ অর্জনও বাংলাদেশের, বাংলাদেশের মানুষের। পাশাপাশি উন্নয়নশীল সব দেশের জন্যই এটা অনুপ্রেরণাদায়ক।'

'পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, প্রত্যেক বাংলাদেশির একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখা উচিত যে, কঠোর পরিশ্রম ও সততার কোনো বিকল্প নেই। সৎ থাকলে ও কঠোর পরিশ্রম করলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। প্রত্যেককে প্রথমেই নিজের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। সেটা যদি কেউ করতে পারে, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সরকারের অনেক সার্ভিস আছে। সৎ থেকে যদি সেগুলোতে অ্যাক্সেস নেওয়া যায় তাহলে অনেক ভালো জায়গায় যাওয়া সম্ভব। শুধু অস্ট্রেলিয়ার কথাই যদি বলি, এখানে স্কিলড বা নন-স্কিলড— উভয় ধরনের বাংলাদেশিরাই ভালো জীবনযাপন করছেন। তারা ভালো করছেন', বলেন তিনি।

শামারুহ মির্জা ২০১৭ সালে 'সিতারাস স্টোরি' (সিতারার গল্প) প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের ২ নারী বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা ও তারামন বিবির নামানুসারেই এই সংগঠনটির নামকরণ করা হয়েছে।

'সিতারাস স্টোরি' নিয়ে তিনি বলেন, 'একটা খবর পড়ে বাংলাদেশিদের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা বোধ করি। সেই অনুপ্রেরণা বোধ থেকেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। আমরা মূলত বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশু, তাদের বাবা-মা ও শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করছি গত ৪ বছর ধরে। এ বছর আরেকটা কাজ হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশের ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন সঙ্গে যৌথভাবে যৌনকর্মীদের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি।'

২০২১ সালেও স্বেচ্ছাসেবকমূলক ও অলাভজনক সংস্থাটিকে মানসিক স্বাস্থ্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। শামারুহ নিজেও ক্যানবেরা 'কমিউনিটি স্পিরিটস অ্যাওয়ার্ড ২০২১' পেয়েছিলেন।

এসিটি সিনিয়র অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার অধ্যাপক টম কালমা এও (বামে) ও এসিটি ইয়াং অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার কোফি ওউসু-আনসাহের (ডানে) সঙ্গে এসিটি লোকাল হিরো অব দ্য ইয়ার শামারুহ মির্জা। ছবি: এসিটি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সম্মানজনক 'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার' পুরস্কারের জন্য শামারুহ মির্জা মনোনীত হওয়ায় পর থেকেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আসেন।

শামারুহ মির্জা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে বায়োটেকনোলজিতে মাস্টার্স করেন।

এরপর দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগেই শিক্ষকতা শুরু করেন শামারুহ। ২০০৬ সালে তিনি পিএইচডি করতে যান অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (এনইউ)। পিএইচডি শেষে ২০১০ সালে দেশে ফিরে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বছরখানেক পর তিনি পোস্ট-ডকের অফার পান। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি চেয়ে না পেয়ে ২০১১ সালে চাকরি ছেড়েই অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান।

শামারুহ বলেন, 'সততার বিষয়টি আমার পারিবারিক শিক্ষা। বোধ হওয়ার পর থেকেই বাবা ও দাদাকে দেখেছি সততার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তারা বলতেন, সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পথটা খুব দুর্গম হতে পারে, অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। কিন্তু, সততার সঙ্গে সেই পথ পাড়ি দিতে হবে। তাহলেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।'

বর্তমানে স্বামী ও এক মেয়ে নিয়ে শামারুহ মির্জা অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় বসবাস করছেন। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সেন্ট্রাল মেডিসিন রেগুলেটরি বোর্ডের আওতাধীন থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (টিজিএ) সিনিয়র টক্সিকলজিস্ট হিসেবে তিনি কর্মরত আছেন।

'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার' পুরস্কারটি ৪টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। এগুলো হলো— এসিটি অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার, এসিটি সিনিয়র অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার, এসিটি ইয়াং অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার ও এসিটি লোকাল হিরো।

এ বছর এই ৪ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৬ জন। আজ ৪ ক্যাটাগরিতে ৪ বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুরস্কার। আগামী বছর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় পুরস্কার ঘোষণার দিন অন্যান্য রাজ্য ও অঞ্চলের পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে 'ফাইনালিস্ট' হিসেবে এই বিজয়ীরা যোগ দেবেন।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago