আইএমএফের ঋণের সুদ কত, শোধ করতে হবে কত বছরে

আইএমএফের ঋণ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার (৪৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) ঋণ পাচ্ছে, এ তথ্য ইতোমধ্যে সবারই জানা। কিন্তু, এ ঋণ বাংলাদেশের হাতে আসবে কবে? ঋণের সুদের হার কত হবে? আর কয়দিনে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে?

বাংলাদেশ এর আগেও আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। এবার সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ১৩তম ঋণ। এর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ২০১২ সালে।

আইএমএফ সাধারণত কোনো ঋণের পরিমাণ এসডিআরে (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) হিসাব করে। যেমন: এই সংস্থাটি বাংলাদেশকে নতুন ঋণ দিবে ৩ দশমিক ৪৬ এসডিআর, যার পরিমাণ আমেরিকান মুদ্রায় দাঁড়ায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলার রেট অনুযায়ী)।

এসডিআর কী

স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) হচ্ছে আইএমএফ ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মজুতকৃত সম্পদের একটি একক।

১৯৬৯ সালে আইএমএফ প্রথম এসডিআর চালু করে। তখন ১ এসডিআরকে দশমিক ৮৮ গ্রাম স্বর্ণের সমান ধরা হতো। এখন ৫টি আন্তর্জাতিক মুদ্রার ওপর ভিত্তি করে এ এসডিআর নির্ধারণ করা হয়। এ ৫টি মুদ্রা হচ্ছে 
আমেরিকান ডলার, ইউরো, চাইনিজ রেনমিনবি, জাপানিজ ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টারলিং।

আইএমএফ প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন মুদ্রার বাজার দরের ওপর নির্ভর করে এসডিআরের দর নির্ধারণ করে এবং তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

আইএমএফের গত ১১ নভেম্বরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১ এসডিআর সমান ১ দশমিক ৩০৯ মার্কিন ডলার।

এবার ফেরত আসা যাক বাংলাদেশের ঋণ প্রসঙ্গে।

আইএমএফ জানিয়েছে, যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা ও চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন হবে।

তবে, বাংলাদেশ একবারে পুরো ঋণটা পাবে না। মোট ৭টি কিস্তিতে এ ঋণ আসবে।

সরকার আশা করছে, আইএমএফ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রথম কিস্তির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর বা ৪৬১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার দিতে পারবে।

আর ঋণের বাকি অংশ দেবে ৬ মাস অন্তর অন্তর এবং ৬টি সমান কিস্তিতে। এখানে প্রতিটি কিস্তি হবে ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর বা ৬৭৯ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার করে।

অর্থাৎ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই ঋণের সর্বশেষ কিস্তিটা বাংলাদেশে চলে আসার কথা।

সুদের পরিমাণ

বলা হচ্ছে, এই ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে বাজারের প্রচলিত সুদের হারের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ ৩ প্রকার ঋণের মাধ্যমে আইএমএফের বর্তমান ঋণ পাবে।

সেগুলো হচ্ছে— এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)।

আইএমএফের ভাষ্যমতে, তারা সেসব দেশকেই এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির অধীনে ঋণ দেয়, যেসব দেশ দীর্ঘসময় বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। অর্থাৎ যেসব নিম্ন আয়ের দেশ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে।

আর সাধারণত যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দীর্ঘসময় ধরে আমদানি আয় আর রপ্তানি ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতায় ভুগছে, তাদেরকে আইএমএফ এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ঋণ দেয়। এ ঋণ সাধারণত সাড়ে ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।

আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির অধীনে আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনাভাইরাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি, ইএফএফের অধীনে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ও আরআসএফের অধীনে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

এই ৩ ঋণের মধ্যে ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ যে ১ বিলিয়ন ডলার পাবে, তার জন্য কোনো সুদ দেওয়া লাগবে না।

তবে, ইএফএফ ও আরএসএফের জন্য বাংলাদেশকে সুদ দিতে হবে। ইএফএফের জন্য তা হবে ভাসমান এসডিআর সুদ হার + ১ শতাংশ এবং আরএসএফের জন্য ভাসমান এসডিআর সুদ হার +  দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ভাসমান এসডিআর সুদ হারের কিছু আলাদা হিসাব আছে।

এ এসডিআর সুদ হার আইএমএফ তার মোট মজুতকৃত সম্পদের মধ্যে চাইনিজ ইউয়ান, জাপানিজ ইয়েন, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড ও আমেরিকান ডলারের কোনটির অংশ কত, তার একটি মূল্য নির্ধারণ করে তার সঙ্গে ওই ৫টি দেশের মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদ হারকে এক করে একটি চূড়ান্ত সুদ হার নির্ধারণ করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতি সপ্তাহের রোববার এই এসডিআর সুদ হার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

গত ১৪ নভেম্বরে এসডিআর সুদ হার ছিল ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ যেদিন ইএফএফ ও আরএসএফের ঋণ হাতে পাবে, সেদিনের এসডিআর সুদ হারের সঙ্গে যথাক্রমে ১ ও  দশমিক ৭৫ যোগ করে বাংলাদেশের সুদ হার নির্ধারণ হবে।

তবে, গত ১৪ নভেম্বরের হার ধরলে ইএফএফের জন্য বাংলাদেশের সুদ হার হবে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ (২ দশমিক ৬৬ + ১) ও আরএসএফের সুদ হার হবে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ (২ দশমিক ৬৬ + দশমিক ৭৫)।

অর্থাৎ এই ৩টি ভাগে দেওয়া ঋণের জন্য বাংলাদেশের গড় ঋণ হার হবে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

ঋণ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ কতদিন সময় পাবে

সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ সময় পাবে ২০ বছর। এখানে ১০ বছরের একটা গ্রেস পিরিয়ড আছে। অর্থাৎ প্রথম ১০ বছর কোনো ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না। ১১তম বছর থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আর বাকি ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ ১০ বছর সময় পাবে। তবে, এই ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ২ ভাগে পরিশোধ করতে পারবে এবং এখানেও আলাদা আলাদা গ্রেস পিরিয়ড থাকবে।

এক ভাগের জন্য সাড়ে ৩ বছর পর্যন্ত কোনো ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না। আর বাকি ভাগের ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ বছর কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago