পেশা ও জন্মগত পরিচয়ের কারণে এখনো অবহেলার শিকার দলিত-হরিজনরা

পেশা ও জন্মগত পরিচয়ের কারণে এখনো অবহেলার শিকার দলিত-হরিজনরা
বৃহস্পতিবার খুলনা নগরীর আভা সেন্টারে ‘দলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

যথাযথ সুযোগ সুবিধার অভাবে বাংলাদেশের দলিত, হরিজন জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন এবং নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে এক সংলাপে উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে বক্তারা বলেন, এখনো দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা শুধু জন্ম এবং পেশাগত কারণে সমাজে অবহেলিত।

'দলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ' বিষয়ে সংলাপ সভায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার খুলনা নগরীর আভা সেন্টারে এই সংলাপ সভার আয়োজন করা হয়।

ইউএসএইড ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দলিত এই সংলাপের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সব সম্প্রদায়ের জন্য সে অধিকার প্রতিষ্ঠা বাস্তবে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের অনেক এলাকার মতো খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরাও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি স্কুলে এখনও দলিত এবং হরিজন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলের বেঞ্চের সামনের দিকে বসতে দেওয়া হয় না। তারা নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন।

তাছাড়া তাদেরকে মুচিপাড়া, ঋষিপাড়া, রবিদাস পাড়া, মেথর পট্টি, সুইপার কলোনি, হরিজন কলোনি, কলুপাড়া, জেলেপাড়া, এসব নামকরণের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও তুলে ধরেন তারা।

খুলনা সিটি করপোরেশনের পাঁচ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, 'সুবিধাবাদী শ্রেণি হিসেবে আমরা সবাইকে পদদলিত করে রাখতে চাই। বিশেষ করে দলিল সম্প্রদায়ের লোকদেরকে আমরা অচ্ছুৎ মনে করি, অস্পৃশ্য মনে করি। কিন্তু এসডিজি অর্জনে কাউকে পেছনে ফেলে আমরা সামনে যেতে পারব না। তাই সরকারের সব দপ্তরকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনি দলিত সম্প্রদায়ের নেতাদের কেউ সামনে এগিয়ে আসতে হবে। দলিত সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে, সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নিতে হবে।'

দলিত এবং হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা যদি নিজেরাই সামনের এগিয়ে আসেন তাহলে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে জানান তিনি।

কমিউনিটি ফেসিলেটর অরুণ দাস বলেন, 'নিজস্ব জায়গা না থাকায় দলিতদের নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। তাছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী দলিত সম্প্রদায়ের ৫৭ জন জেলে বসবাস করছেন। কিন্তু তারা কেউই এখনো পর্যন্ত জেলেকার্ড পাননি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'খুলনা সিটি করপোরেশের ১০টি ওয়ার্ডে দলিত সম্প্রদায়ের বসবাস। কিন্তু তাদের জন্য সোনাডাঙ্গায় হরিজন পল্লী নামে মাত্র একটি জায়গা বরাদ্দ আছে। অন্যগুলোতে তারা থাকেন উদ্বাস্তুর মতো। খাস জায়গায় থাকায় যে কোনো সময় উচ্ছেদের ভয়ে থাকেন তারা। দলিত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত।'

সরকার এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো এগিয়ে এলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, 'হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা যেখানে বসবাস করেন সেটা এক কথায় বসবাসের অনুপযোগী জায়গা। সেখানে সুপেয় পানির সংস্থান নাই, পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নাই, আবাসনের সুযোগ নাই, পর্যাপ্ত ড্রেন নাই। সব মিলিয়ে একটি অমানবিক অবস্থায় তারা বাস করেন।'

সংলাপ সভায় খুলনা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যরা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

The end of exemption?

TRIPS waiver end poses dual challenge: legal and technological

20h ago