বিশ্বকাপ ফুটবল: টিভি বিক্রি আশানুরূপ নয়

রাজধানীর মাল্টিপ্ল্যানের টিভির দোকান। ছবি: স্টার

ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে যে পরিমাণ টেলিভিশন বিক্রি হবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হচ্ছে না। এমনকি গত বিশ্বকাপের সময় যে পরিমাণে টেলিভিশন বিক্রি হয়েছিল, এ বছর তার চেয়েও কয়েক গুণ কম হচ্ছে।

দেশে টিভি উৎপাদনকারী ৩টি প্রতিষ্ঠান এবং রাজধানীর মাল্টিপ্ল্যান, আইসিটি ভবনের ১৫ জন টিভি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস নীতেশ রঞ্জন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েকমাসের কথা যদি বলি, তাহলে আমাদের টিভি বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু, যদি ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের আগের টিভি বিক্রির সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে ২০ শতাংশ কমেছে।'

ওয়ালটনের টিভি প্রোডাক্ট ম্যানেজার তানভীর মাহমুদ শুভ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্বকাপ উপলক্ষে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমাদের ১ লাখ টিভি বিক্রির টার্গেট। কিন্তু, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে আমাদের টিভি বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে। আমাদের যে টিভিগুলোর দাম তুলনামূলক কম, সেগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। যেমন: আমাদের মোট বিক্রির মধ্যে ৫০ শতাংশই ৩২ ইঞ্চি টিভি, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ৪৩ ইঞ্চি এবং ২০ শতাংশ অন্যান্য আকারের টিভি বিক্রি হচ্ছে।'

টিভির ক্রেতা কমেছে জানিয়ে তানভীর মাহমুদ শুভ বলেন, 'মানুষ মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণের পর টিভিসহ অন্যান্য পণ্য কিনে থাকেন। কিন্তু এখন জিনিসপত্রের দাম বেশি, মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না।'

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের হেড অব প্রোডাক্ট মো. মুসফিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমাদের উৎপাদিত স্যামসাং টিভি বিক্রির যে প্রত্যাশা ছিল, সেই তুলনায় বিক্রি বাড়েনি। এ মাসে টিভি বিক্রির আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তার ৩০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো প্রায় ১০ হাজার। যেসব টিভি বিক্রি হচ্ছে, তার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজার রেঞ্জের টিভিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।'

'সবাই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে আছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে সামনে দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। এ কারণেই টিভি বিক্রি কম হচ্ছে', মনে করছেন মুসফিকুর রহমান।

রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের আইসিটি ভবনের এস এন্টারপ্রাইসের আকরামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইমপোর্ট বন্ধ থাকায় টিভির দাম বেড়ে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি টিভি বিক্রি করতাম, এখন ৭ থেকে ৮টি করি। আমরা মূলত চীন থেকে ইমপোর্ট করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি বিক্রি করি।'

আইসিটি ভবনেই সনি, স্যামসাং, এলজিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি বিক্রি করে ড্রিম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড।

রাজধানীর মাল্টিপ্ল্যানের টিভির দোকান। ছবি: স্টার

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. মোস্তফা আহমেদ রনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বিশ্বকাপের তুলনায় এ বছর টিভির বিক্রি অনেক কম। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ শুরুর কয়েকদিন আগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি টিভি বিক্রি করতাম। এ বছর প্রতিদিন বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫টি।'

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি— এসবই বিক্রি কমে যাওয়ার করণ বলে মনে করছেন মোস্তফা আহমেদ রনি। তা ছাড়া প্রতিটি টেলিভিশনের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যানে টেলিভিশন বিক্রি করেন টিভি স্টেশনের প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল রানা। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষ সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা পূরণের পর টিভিসহ অন্যান্য বিনোদনমূলক বা বিলাসবহুল পণ্য কেনেন। কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই টিভি বিক্রিও এ বছর অনেক কমেছে।'

বেড়েছে প্রজেক্টর বিক্রি

ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে টিভি বিক্রি তুলনামূলক না বাড়লেও প্রজেক্টর বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

মাল্টিপ্ল্যানে প্রজেক্টরের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা অল আইটি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ৫ দিনে প্রায় ১ হাজার প্রজেক্টর বিক্রি করেছি। সেই হিসাবে প্রতিদিন আমাদের ২০০ করে প্রজেক্টর বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রজেক্টরের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।'

কী ধরনের প্রজেক্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে, জানতে চাইলে রাজু আহমেদ বলেন, 'আমাদের এখানে সব ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর আছে। তবে যেসব প্রজেক্টরের দাম ১০ হাজার টাকার মধ্যে, সেগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। দামি ব্র্যান্ডের যেমন: এপসন, ভিভিটেক, ভেনকিউ— এসব প্রজেক্টর তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না।'

গুড ইলেকট্রনিক্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আপন খানও একই কথা জানান। তিনি বলেন, 'আমার এখানে কমদামি প্রজেক্টর নেই। বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সি-৮, সি-৯— এসব প্রজেক্টর যেগুলোর দাম ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে, সেগুলো বিক্রি বেশি হচ্ছে। অনেক ক্লাব বা সংগঠন এসব প্রজেক্টর কিনছে, তাই চাহিদা বেশি। বেশি বিক্রি হওয়ার কারণে বাজারে প্রজেক্টরের একটু সংকট দেখা যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Air freight capacity to increase

The Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB) and Biman Bangladesh Airlines are enhancing their air cargo infrastructure following India’s sudden suspension of third-country transhipment.

9h ago