৫০ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি

১ লাখেরও বেশি মানুষ একটি সেতুর জন্য অপেক্ষায় আছেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অরুয়াইল এলাকায় ছেত্রা নদী পার হতে সেখানকার ২ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতি বছর প্রায় ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। এসব গ্রামের ১ লাখেরও বেশি মানুষ একটি সেতুর জন্য অপেক্ষায় আছেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে।

অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া, কাকুরিয়া, রাজাপুর, অরুয়াইল, বাদে-অরুয়াইল, বারপাইকা, বুনিয়ারটেক, ধামাউড়া, দুবাজাইল এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের পাকশিমুল, ফতেপুর, পরমানন্দপুর, হরিপুর, সাতবাড়িয়া ও বরইচারা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো দিয়ে পারাপার হওয়া গেলেও ভোগান্তি হয় বর্ষায়। বর্ষায় তাদের যাতায়াতের মাধ্যম হয় নৌকা।

শুষ্ক মৌসুমে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকোটি প্রায় ৯০০ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া। কেবল একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন গ্রামের মানুষে স্বেচ্ছাশ্রমে ১৯৯৭ সালে বাঁশের এই সাঁকোটি প্রথমে নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতি বছর বর্ষায় পুরোনো সাঁকো খুলে ফেলেন এবং শুষ্ক মৌসুমে আবারও সাঁকো বানান। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

রাণীদিয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বশির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং রোগী, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদেরকে এই পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে হয়।'

গ্রামবাসীরা জানান, সেতুর পূর্ব প্রান্তে অরুয়াইল বাজার, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। এই বাঁশের সাঁকো ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ নেই ১৫টি গ্রামের মানুষের।

তাছাড়া, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ওই এলাকার কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। হাওড়বেষ্টিত কৃষি নির্ভর এই গ্রামগুলোতে উৎপাদিত ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, 'নদীতে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু কিছুই হয়নি। অনেকে নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু নির্বাচনের পর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি।'

স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দেউবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছালাতুর রহমান সবুজ বলেন, 'প্রায় ২৫ বছর আগে সাঁকোটি গ্রামবাসীরা নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামের মানুষ প্রতি বছর সাঁকোটি মেরামত করতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দেন। এটি মেরামতে খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। প্রতি বছর গ্রামের মানুষ মেরামত কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেন।'

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা তো দূরের কথা, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এই এলাকার মানুষ পুরনো বাঁশের সাঁকো মেরামতের জন্য কখনোই সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। বর্ষায় গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ জন্য নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি এলাকাবাসীর।'

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ একটি সেতুর অভাবে বহু বছর ধরে কষ্ট করছে। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দিয়েছি।'

এলজিইডির সরাইল উপজেলার মাঠ পর্যায়ের আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, '১০০ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব তৈরি করে সফট কপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এটা প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Mustafa Zaman Abbasi no more

Mustafa Zaman Abbasi no more

Mustafa Zaman Abbasi, a revered Bangladeshi musicologist, author, and television figure, has passed away at the age of 87. He died at 7 am on Saturday morning at a hospital in Banani. His daughter, Sharmin Abbasi, confirmed the news.

25m ago