জঙ্গি ছিনতাই: সামনে এল ৬ বছর আগের এক মামলা

দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ২ আসামি মাইনুল হাসান শামীম এবং আবু সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

গত ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সহযোগীরা। এ ঘটনার পর জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ৬ বছর আগে করা একটি মামলা সামনে এসেছে।

২০১৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় করা হয়েছিল মামলাটি। মামলাটির তদন্তে গিয়ে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন পুলিশের কাউন্টারটেররিজম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা।

২০২১ সালের ৮ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। ২০ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। চার্জশিটে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তারা সবাই বিভিন্ন অপারেশনে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে তদন্তে পাওয়া যায়।

চার্জশিটে আনসার আল ইসলামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ৩ প্রশিক্ষণার্থী দলের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে স্থাপিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জঙ্গিদের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডিএস) তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। প্রতিটি দলকে ২ মাস করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

চার্জশিটে বলা হয়, সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর (বরখাস্ত) জিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ছিলেন। সংগঠনের অপর দুই নেতা শাহীন আলম ও শাহালাম ওরফে সালাউদ্দিনের সঙ্গে তিনি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতেন।

শাহীন ও শাহালাম বর্তমানে কারাগারে থাকলেও জিয়া পলাতক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা জানান, ব্লগার ও মুক্তমনাদের ৬টি হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জিয়া। গত ২০ নভেম্বর আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও তার।

পলাতক দুই জঙ্গির মধ্যে মইনুল হাসান শামীম জিয়ার মোহাম্মদপুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দ্বিতীয় ব্যাচে এবং আবু সিদ্দিক সোহেল তৃতীয় ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেন।

২০১৬ সালের ওই সন্ত্রাসবাদী মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি ইদি আমিন এবং মেহেদী হাসান অমি জামিনে ছিলেন।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলার পর ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

তদন্তকারীরা বলছেন, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পেছনে এই দুজন সমন্বয়কারী ও পরিকল্পনাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন।

২০১৬ সালের মামলার চার্জশিটে সংগঠনটির ৩ শীর্ষ প্রশিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন-আয়মান ওরফে মশিউর রহমান, তানভীর ওরফে সামাদ এবং ওমর ফারুক।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, আয়মান বর্তমানে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান এবং তিনি জঙ্গি ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তানভীর আইইডি এবং ফারুক তাত্ত্বিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।এই ৩ জনই এখন পলাতক।

২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আরও দুই জঙ্গি আবদুস সবুর এবং আরাফাতকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সহযোগীরা। কিন্তু পুলিশ এ দুজনকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে সক্ষম হয়। 

মোহাম্মদপুর থানায় করা ওই মামলার চার্জশিটে এই দুজনের নামও ছিল। সবুর প্রথম ব্যাচে এবং আরাফাত দ্বিতীয় ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেন। দুজনই এখন কারাগারে আছেন।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা মামলার তদন্ত করে আনসার আল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। সংগঠনের সদস্য ও নেতৃত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছি।'

আদালত সূত্র জানায়, ২০ নভেম্বর দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার আগে আদালতে ওই মামলার অভিযোগ গঠন হয় এবং ৫ জানুয়ারি বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

1h ago