শরিকদের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার বামপন্থী মিত্রদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দলগুলোকে উপেক্ষা করায় এবং ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনের জন্য ‘প্রচার-প্রচারণা’ শুরু করে দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শরিক দলগুলো।
Bangladesh Awami League logo

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার বামপন্থী মিত্রদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দলগুলোকে উপেক্ষা করায় এবং ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনের জন্য 'প্রচার-প্রচারণা' শুরু করে দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শরিক দলগুলো।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের এক বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ তাদেরকে শুধু তখনই ডাকে, যখন তারা কোনো সংকটের মুখোমুখি হয়।

বামপন্থী দলগুলো আরও জানায়, আওয়ামী লীগ তাদেরকে সরকারে কোনো জায়গা দেয় না এবং এই জোটের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয় না, যা হতাশাজনক।

এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু। বৈঠকটি ইস্কাটনে তার নিজস্ব বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জোটের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা এবং 'নৌকা' মার্কার জন্য ভোট চাওয়া শুরু করেছেন।

জোটের নেতারা আমুকে জানান, তারা এখনো জানেন না, আওয়ামী লীগ কি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে না জোটের অংশ হিসেবে নেবে। তারা এটাও জানেন না যে, এ বিষয়ে তাদের কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না। কারণ আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগ ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় মহাজোটের ব্যানারে অংশ নেয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় পার্টিসহ এই মহাজোট গঠন করা হয়েছিল।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নাজিবুল বাশার মাইজভান্ডারিসহ অন্যান্য নেতারা গতকালের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে এককভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে উল্লেখ করে ইনু প্রশ্ন রাখেন, জোটের অংশীদাররাও কি প্রচারণা শুরু করবে, না চুপচাপ বসে থাকবে?

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, দিলীপ বড়ুয়া অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং জনগণের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সরকারকে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও জানান, বিএনপি দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়।

যদি সরকার আর্থিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে, তাহলে এটা বিরোধী দলকে তাদের 'অশুভ উদ্দেশ্য' সফল করতে সহায়তা করবে।

'এর মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকটেরও সৃষ্টি হতে পারে', যোগ করেন দিলীপ বড়ুয়া।

ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও আর্থিক দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতির বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

মঞ্জুর বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, যদি বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার বজায় থাকে, তাহলে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হতে পারে।

তিনি জানতে চান, যদি কর্মীরা মূল্যস্ফীতির প্রতিবাদে সড়কে নেমে আসে, তাহলে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আওয়ামী লীগের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবহার করা 'খেলা হবে' উক্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। 'এ ধরনের শ্লোগান ১৪ দলীয় মহাজোটের ভাবমূর্তি ও মূলনীতির সঙ্গে খাপ খায় না', যোগ করেন তিনি।

সূত্র মেননের বরাত দিয়ে আরও জানায়, এ ধরনের স্লোগানের ব্যবহার দেশকে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবে। তাই তা পরিহার করার সুপারিশ করেন তিনি।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসমাইল হোসেন জানতে চান, কেন সরকার জাতীয় নির্বাচনের ১ বছর আগে থেকেই প্রচারণা শুরু করেছে, বিশেষত দেশে যখন মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকট চলছে।

জোটের নেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও হতাশার প্রতিক্রিয়ায় আমির হোসেন আমু বলেন, ২৪ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর দলটি ১৪ দলীয় মহাজোটের ব্যানারে একটি কর্মসূচি করবে।

সূত্র আরও জানায়, তিনি জেলা পর্যায়ে মহাজোটকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

আমু আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোটের ব্যানারে অংশগ্রহণ করবে।

বৈঠকের পর দেওয়া ব্রিফিংয়ে আমু সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে বিএনপি ও 'দেশকে অস্থিতিশীল করার অসৎ উদ্দেশ্য' সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

5h ago