শিক্ষকের ছেলে আজ ১৬ বছর ধরে মন্ত্রী, আর কী চাই: ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। ছবি: সিরাজুল ইসলাম রুবেল/স্টার

টানা তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'আমার মতো এক শিক্ষকের ছেলে আজ ১৬ বছর মন্ত্রী। আর কী চাই? কিছু চাই না জীবনে। রাজনীতি করে সব চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেছে।'

আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি এ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

গতকাল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। টানা তিনবারের মতো এ দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলাম। আবার ২০১১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। কতজনের এমন সৌভাগ্য হয়েছে? আমার নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৪ বছর বয়সে নিহত হন। তিনি অল্প সময়ের জন্য মন্ত্রী হতে পেরেছেন। সেখানে আমার মতো এক শিক্ষকের ছেলে আজ ১৬ বছর মন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হতে পেরে আমি ভাগ্যবান। স্বাধীন বাংলাদেশে আমিই প্রথম তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক। এটি আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি মৃত্যুর বিছানা থেকে ফিরে এসেছিলাম।'

গ্রামে তার অতীত সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি গ্রাম থেকে এসেছিলাম। আমার বাবা কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন। আমি এক শিক্ষকের ছেলে। যিনি চাকরি করতেন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমি গ্রাম থেকে এ শহরে এসেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলাম। স্বাধীনতার পরও কিছুদিন ছিলাম। ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না। মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ পেয়েছি। রাজনীতি করলে ক্যারিয়ার নষ্ট হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। যে পারে সে সব পারে।

'রাজনীতিতে কমিটমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের মানসিকতা থাকতে হবে। জীবন একটি চ্যালেঞ্জ। স্রোতের প্রতিকূলে আমরা লড়াই করছি। জীবনের অপর নাম আপসহীন লড়াই। যে নদীতে ঢেউ নেই, সেটি নদী নয়। যে আকাশে মেঘ নেই, সেটি আকাশ নয়। যে প্রকৃতিতে দুর্যোগ নেই, ঝড় নেই সেটি প্রকৃতি নয়।'

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সেদিন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে ছিলাম। সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত বোধ করছিলাম। হঠাৎ কানে এলো মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার তখন রেডিও বাংলাদেশ। তারপর জয় বাংলা নিষিদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিষিদ্ধ, বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার স্থপতি নিষিদ্ধ। এটাই আমাদের ইতিহাস। এখানে এলে আমাদের সেইসব স্মৃতি ভেসে উঠে। আমাদের স্মৃতি বিজড়িত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।'

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, 'আজকের রাজনীতিতে আগের চিত্র পাল্টে গেছে। এখন নেতার আড়ালে কর্মী চেনা মুশকিল। বড় মঞ্চে গেলে দেখি, মঞ্চগুলো নেতায় ভরে গেছে। দেশটা যেন নেতা উৎপাদনের কারখানা।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ছাত্র রাজনীতিকে দুর্নামের ধারা থেকে বের করে আনতে চাই। সেই অতীতের ধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। সেই সুনামের ধারা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।'

ছাত্র নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'ছাত্র রাজনীতিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে নেতৃত্বকে আকর্ষণীয় হতে হবে। স্মার্ট মানে সুন্দর পোশাক পরা না। সাধারণ পোশাক পরেও স্মার্ট হওয়া যায়। স্মার্টনেসটা চেতনায়, মননে। তখন সেটি বাহিরে ফুটে উঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটা আগের মতো শুনি না। এখন শুনি ভর্তি বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য। আমাদের ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে নেত্রী খুব আশাবাদী।'

ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের নাম উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নেত্রী তোমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের শুধু একটাই চাওয়া, ছাত্র রাজনীতিকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তা যদি করতে পারো, তাহলে সফল হবে। আর না পারলে সেই পুরোনো বিষয়গুলো আবারও আমাদের কাছে আসবে।'   

'আমাদের নেত্রীর পরবর্তী কমিটমেন্ট স্মার্ট বাংলাদেশ। এর জন্য ছাত্রলীগকে কাজ করতে হবে', যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

Comments

The Daily Star  | English

Decision on AL’s registration after receiving govt ban order: CEC

The decision to ban was made at a special meeting of the council following three days of demonstrations demanding a ban on the party

1h ago