২০২২ সালে শোবিজ যাদের হারিয়েছে

(উপরে বাম থেকে) গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলম খান, শর্মিলী আহমেদ, মাসুম আজিজ, (নিচে বাম থেকে) আজিজুর রহমান, কে জি মোস্তফা, আকবর ও ওমর ফারুক বিশাল। ছবি: সংগৃহীত

শোবিজ অঙ্গনের অনেককেই আমরা এ বছর হারিয়েছি। তারা হারিয়ে গেলেও, বেঁচে আছেন তাদের সৃষ্টিতে। 

চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক, মঞ্চ নাটক ও সংগীতে থেকে যাবে তাদের অসামান্য অবদান। এই তালিকায় আছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলম খান, শর্মিলী আহমেদ, মাসুম আজিজ, কে জি মোস্তফা, আজিজুর রহমান, আকবর, ওমর ফারুক বিশাল। 

২০২২ সালে হারিয়ে যাওয়া কয়েকজন গুণীজনকে নিয়ে এই আয়োজন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৪ সেপ্টেম্বর  মারা গেছেন। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বেতার, টেলিভিশন ও সিনেমায় অসংখ্য গান লিখেছেন তিনি। ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। 

বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই গান লিখছেন বিটিভির জন্য। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা ৩টি গান স্থান পেয়েছে।

স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ৫ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। 

তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল, শুধু গান গেয়ে পরিচয়, ও পাখি তোর যন্ত্রণা, ইশারায় শীষ দিয়ে, চোখের নজর এমনি কইরা, এই মন তোমাকে দিলাম, চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে। 

এছাড়া তার লেখা কালজয়ী গানগুলো হলো-জয় বাংলা বাংলার জয়, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়। 

আলম খান

বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান ৮ জুলাই মারা গেছেন। সর্বমোট ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ৫ বার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে পেয়েছেন। 

তার সুরারোপিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা, তুমি যেখানে আমি সেখানে, সবাই তো ভালবাসা চায়, ভালবেসে গেলাম শুধু, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, তেল গেলে ফুরাইয়া, আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী, জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প, মনে বড় আশা ছিল, সাথীরে যেও না কখনো দূরে, বেলি ফুলের মালা পরে, কাল তো ছিলাম ভালো, চুমকি চলেছে একা পথে, ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া, তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছ, আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে ইত্যাদি।

শর্মিলী আহমেদ

খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ ৮ জুলাই মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সিনেমা, মঞ্চ, টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। 

প্রায় ৪০০ টেলিভিশন নাটক ও প্রায় ১০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। ১৯৬২ সালে তিনি রেডিওতে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। 

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে—মালঞ্চ, দম্পতি, আগুন, আবির্ভাব, পৌষ ফাগুনের পালা, মেহেরজান, আবার হাওয়া বদল, বৃষ্টির পরে, আমাদের আনন্দ বাড়ি, আঁচল, আগন্তুক, ছেলেটি, উপসংহার ইত্যাদি।

মাসুম আজিজ

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার মাসুম আজিজ ১৭ অক্টোবর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

'ঘানি' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়কলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। 

প্রায় ৪ শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন মাসুম রেজা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে-গহীনে শব্দ, এই তো প্রেম, গাড়িওয়ালা। 

সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র 'সনাতন গল্প' পরিচালনা করেছেন তিনি। এটি  ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল। 

কে জি মোস্তফা

গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা ৮ মে মারা যান। ১৯৬০ সাল থেকে তার লেখা গান চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। 

তার লেখা উল্লেখযোগ্য গান হলো-তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে, আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন।

১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কে জি মোস্তফা। খ্যাতিমান এই গীতিকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের 'দেশবরেণ্য গীতিকার' পদকে ভূষিত হয়েছেন।

আজিজুর রহমান

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান ১৫ মার্চ কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। 

আজিজুর রহমান পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে-ছুটির ঘণ্টা, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, জনতা এক্সপ্রেস, সাম্পানওয়ালা, ডাক্তার বাড়ি, গরমিল ও সমাধান ইত্যাদি।

আকবর

কণ্ঠশিল্পী আকবর ১৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। হানিফ সংকেতের 'ইত্যাদি' অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের 'একদিন পাখি উড়ে' গানটি গেয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। পরে প্রথম মৌলিক গান 'তোমার হাতপাখার বাতাসে' গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান। 

ওমর ফারুক বিশাল

তরুণ গীতিকার, সাংবাদিক ওমর ফারুক বিশাল ৭ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তার লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে আছে সাব্বির নাসিরের 'আধা', তাহসানের 'স্বল্প কথার গল্প' ও মিনারের 'আলো নেই আলোতে'। 

এছাড়াও ভারতের সংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্যের কণ্ঠে 'তোমার ভালো মন্দে' ও অনুপম রায়ের কণ্ঠে 'পারছি তো খুব' গান ২টি তিনি লিখেছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
VAT changes by NBR

Govt divides tax authority in IMF-backed reform

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

1h ago