রেলের বাসায় বহিরাগতদের বসবাস

রেলের বাসায় বহিরাগতদের বসবাস
রেলের সরকারি বাসায় বহিরাগতরা বসবাস করছেন। ছবি:সিফায়াত উল্লাহ/স্টার

চট্টগ্রাম নগরের জান আলী হাট স্টেশনের রেলওয়ের সরকারি কোয়ার্টার বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কলোনির আঙিনার খালি জায়গায় অবৈধভাবে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগও নেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের একটি তালিকায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তালিকা অনুযায়ী, জান আলী হাট রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা রয়েছে ৪৪টি। তারমধ্যে ৯টি পরিত্যক্ত ও সিলগালা করা, ৩০টি বাসাতে অবৈধ দখলদাররা বসবাস করছেন। বাকিগুলো স্টাফদের নামে বরাদ্দ।

এ ছাড়া কলোনির আঙিনার খালি জায়গায় অন্তত ৫০টি অবৈধ ঘর নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চলছে। এসব বাসা ভাড়া দিয়ে লাখ টাকার ভাড়া আদায় হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাসা ভাড়ার টাকার একটি অংশ যাচ্ছে জান আলী হাট স্টেশনের মাস্টার আবদুস সালাম ভূঁইয়ার পকেটে। তবে তিনি টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেছেন।

ছবি:সিফায়াত উল্লাহ/স্টার

স্টেশনের মাস্টার আবদুস সালাম ভূঁইয়া দাবি করেন, তার নাম ভাঙিয়ে অন্যরা ভাড়া আদায় করছে।

'আমি কাউকে বাসা ভাড়া বরাদ্দ দেইনি। কারও কাছ থেকে ভাড়াও নিই না। কেউ হয়তো আমার নাম ভাঙিয়ে ভাড়া আদায় করছে,' দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে কাপ্তাই রাস্তার মাথা গেটের পাশে সরকারি কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, একতলা ৮টি বাসায় বহিরাগতরা বসবাস করছেন। আশপাশে থাকা খালি জায়গায় টিন দিয়ে আরও ১৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোতেও ভাড়াটিয়া রয়েছে।

স্টেশন ভবন সংলগ্ন কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী স্টেশন মাস্টারের নামে বরাদ্দ বাসাটিতেও বহিরাগতরা বসবাস করছেন। এ ছাড়া খালি জায়গাতে অন্তত ৩০টি বাসা তৈরি করে সেগুলোও ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

কালুরঘাট সেতুর পাশে সরকারি কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি একটি বাসায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন কালুরঘাটের অস্থায়ী গেটম্যান সাইফুল। বাকি বাসাগুলোতে বহিরাগতরা বসবাস করতেছেন।

ভাড়াটিয়া আবদুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুই রুমের বাসায় আমরা ৩ জন থাকি, ভাড়া ২৫০০ টাকা। সুজন নামে এক ব্যক্তি আসেন ভাড়ার জন্য, প্রতিমাসের ৮-১০ তারিখের মধ্যে তাকে ভাড়া দিই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী ভাড়াটিয়া বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। এখানে ভাড়া কম, তাই বাধ্য হয়ে সরকারি বাসায় থাকছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সুজন ও অস্থায়ী গেটম্যান সাইফুল ইসলাম ভাড়াটিয়াদের কাছ ভাড়া আদায়ের কথা ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে সেই টাকা স্টেশন মাস্টারকে দেন কিনা জানতে চাইলে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তারা।

সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এসব বাসায় গরিবরা থাকেন। তেমন ভাড়া দেন না।

এরপর তিনি বলেন, স্টেশন মাস্টার হেল্প করেন বলে আমরা কিছু টাকা কামাই করি।

ভাড়ার টাকা কাকে দেন জানতে চাইলে সুজন ফোন কেটে দেন।

পরে ফোন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকে সরাসরি দেখা করতে বলেন।

অস্থায়ী গেটম্যান সাইফুল বলেন, ভাড়া কাকে দিই সেটা আপনাকে বলব কেন? এরপর তিনিও ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, স্টেশন মাস্টার সালাম রেলের বাসা ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন।

মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্টেশন এলাকায় পরিদর্শনে আসলে স্টেশন মাস্টার সালামের এই অনিয়মের কথা জানানো হয়। কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম বলেন, অবৈধ সুবিধা দিচ্ছি না বলে স্থানীয়রা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

তিনি বলেন, আমি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি।

জান আলী হাট রেলস্টেশনের সরকারি বাসাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এর কার্যালয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবদুল হানিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা আমরা ইতোমধ্যে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে জমা দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।

সম্প্রতি জান আলী হাট স্টেশন পরিদর্শন করে সেখানে অবৈধ দখলদারদের আধিপত্য দেখেছেন বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবিদুর রহমান।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, স্টেশনে অবস্থিত রেলের সম্পদ তদারকি দায়িত্ব স্টেশন মাস্টারের, তিনি ইনচার্জ হিসেবে সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। সবকিছু দেখার দায়িত্ব তার। কিন্তু তিনি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেননি।

তিনি বলেন, 'রেলের কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে স্টেশনে মাস্টার যদি টাকা আদায় করে তাহলে সেটা অপরাধ। এই অভিযোগটি আমি তদন্ত করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মাস্টারের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

31 banks lost Tk 3,600cr in stock rout last year

Thirty-one banks suffered combined losses of Tk 3,600 crore from their stock market investments last year, largely because of poor decisions, misuse of funds and a sluggish market..State-owned banks were hit the hardest, while private commercial banks also reported losses despite being kno

11h ago