লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন সংগ্রহ নিয়ে সংশয়

আমন ধান চাল সংগ্রহ
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সংকটকালে খাদ্য ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করে। তবে এ বছর সংগ্রহের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই দেখা গেছে সংশয়।

অর্ধেকের বেশি সময় পার হলেও এখনো ২৫ শতাংশ সংগ্রহের কাজ শেষ করা যায়নি। চাল সংগ্রহ কিছুটা এগুলেও ধান সংগ্রহ কার্যক্রম প্রায় ভেস্তে গেছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা গেছে।

৪২ টাকা কেজি দরে চাল আর ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কেনার বিষয়টি নির্ধারণ করে গত ১৭ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্ধেকের বেশি সময় কেটে গেলেও এর আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। পাবনা ও সিরাজগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের প্রায় ২ মাসের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার ১১ সরকারি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে ১২ হাজার ৭৮৬ মেট্রিক টন চাল আর ৩ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৭০৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো ধান সরবরাহ করতে কৃষক না আসায় তা সংগ্রহ করা যায়নি।

পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্ধারিত সময়ে জেলার ৯২ মিলার ৩ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। জেলার ৪ শতাধিক চালকলের বেশিরভাগ মিল মালিকরাই সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।'

মিলাররা তাদের চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহের পর অতিরিক্ত বরাদ্দ চাইলে সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে মিলারদের এমন অনীহার বিষয়ে পাবনা জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলি বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে চালের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।'

বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি লেগে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার এ বছর ৪২ টাকা কেজি দরে চাল আর ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। তবে মিলাররা বলছে এ দামে ধান সরবরাহ করা লোকসানের সামিল।

চুক্তিবদ্ধ মিলাররা কীভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করতে পারছেন? এর জবাবে ইদ্রিস আলি বিশ্বাস বলেন, 'যে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই অটো রাইস মিলের চাল সরবরাহকারী।'

৮ রাইস মিলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা সরকার-নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করতে পারছে বলে মনে করেন তিনি।

কৃষকরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ধানের বাজারে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করে মনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবত্র গ্রামের কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে গেলে দাম কম পাওয়া ছাড়াও টাকা পেতে দেরি হয়। পরিবহন খরচ বেশি হয়। ভোগান্তিও পোহাতে হয়। এসব কারণেই সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ নেই।'

পাবনার চেয়ে সিরাজগঞ্জের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও সেখানেও ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় আছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।'

তবে, এ পর্যন্ত এ জেলায় ২ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ কেজি ধান সংগ্রহ করা গেছে।

তিনি আরও বলেন, 'জেলার ৭ খাদ্য গুদামের মাধ্যমে সংগ্রহ কার্যক্রম চললেও চাল মিলারদের মধ্যে অনেকেই সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি।'

জেলার প্রায় ৩৫০ চাল কলের মধ্যে ২০০ মিলার ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহের চুক্তি করেছেন। বাকিরা চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ নিয়ে সংশয় আছে।

যে মিলাররা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই খাদ্য কর্মকর্তা।

সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের জন্য কৃষকরা না আসায় ধান সংগ্রহও করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগ চিন্তিত নয় বলে তিনি জানান।

সাইফুল ইসলামের মতে, 'ধানের সরকারি মূল্য নির্ধারণের কারণে বাজারে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। ধান সংগ্রহ না হলেও তাতে সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।'

খাদ্য বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহে 'জোর প্রচেষ্টা' চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

4h ago