বিশ্বের কোনো দেশ গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় না: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বের কোন দেশ বিদ্যুৎ, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে বলেছেন, শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে সরকার যে দামে গ্যাস আমদানি করে শিল্প মালিকদের সে দাম পরিশোধ করতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
শেখ হাসিনা
বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বিশ্বের কোন দেশ বিদ্যুৎ, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে বলেছেন, শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে সরকার যে দামে গ্যাস আমদানি করে শিল্প মালিকদের সে দাম পরিশোধ করতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, আইএমএফ তখনই ঋণ দেয় যখন ওই দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। এখানে বাংলাদেশ তেমন কোনো শর্তে ঋণ নিচ্ছে না।

এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক অনির্ধারিত আলোচনায় বলেন, আইএমএফের ঋণের জন্য গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির যে চাপ তৈরি হবে সরকার কীভাবে তা সামলাবে সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মুজিবুল হকের বক্তব্যের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি। গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুত ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এই ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ আজকে বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজকে সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।'

গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ, বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলে সেটা সরকার কীভাবে দেবে—এই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছেন, তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি। গ্যাস আমি দিতে পারব, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম, সেই মূল্য যদি আপানারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারব। আমরা বাল্কের যেটুকু বাড়ানোর বাড়িয়েছি। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এটা ভুলে যাবেন না, ভর্তুকির টাকাতো জনগণেরই টাকা। যত মূল্য কম থাকে তাদের আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম আয়েশ করবে আর স্বল্প মূল্যে পাবে, তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি।'

মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দেওয়া হয়েছে। একেবারে হতদরিদ্রের জন্য বিনাপয়সায় খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়- তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।'

এর আগে জাতীয় পর্টির মুজিবুল হক বলেন, আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেশে আলোচিত। এই ঋণ পেতে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঋণের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। এতে করে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে উৎপন্ন পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এই চাপ সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে?

জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু পাকিস্তান সফরের পর তেহরিক-ই ইনসাফ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। তিনি বাংলাদেশে আসার পরে অনেকে মনে করেছিলেন, সরকারের কিছু একটা হবে। উনি যাওয়ার পরে সরকার মনে হয় খুব খুশি। আবার একটি দল মনে হয় খুবই অখুশি। রাজনৈতিকভাবে বর্তমান যে অবস্থা, মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন আছে- অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা কী যেন হয়। এ ধরনের কিছু আছে কি না? এ সময়ে তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তিনি মাইক ছাড়াও আরও কিছু বলতে থাকেন।

তার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটু সর্দিকাশি হয়েছে বলে বেশি বলতে চাচ্ছিলাম না। আর ছড়াতেও চাই না। শুধু প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেছিলাম। এই প্রশ্নের উত্তরটা না দিলেই নয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Nor’wester brings relief, triggers waterlogging in Ctg

The nor'wester or kalboishakhi, a storm that is natural to this season, struck the port city and adjoining areas immediate after 3:00pm and the downpour followed soon afterwards

23m ago