আমদানিকারকদের দুর্ভোগ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই

চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ছবি

আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ বিদেশ থেকে নিত্যপণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য আলাদা করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

গত ৫ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি পাঠিয়ে ভোজ্য তেল, পরিশোধিত চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা ও খেজুর আমদানিতে সহায়তা করার অনুরোধ জানায়। রমজান মাসে উচ্চ চাহিদার এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই মূলত এই উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।

এর ২ সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর একাধিক শীর্ষ আমদানিকারক বাংলাদেশের উপকূলে পণ্য নিয়ে আসার পর সেগুলোকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন।

রমজান মাসকে সামনে রেখে আমদানি করা প্রায় ৫৪ হাজার টন চিনি ও ভোজ্যতেল চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ থেকে ৫৫ দিন ধরে আটকে আছে, কারণ আমদানিকারকরা আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। বিল শোধ করতে না পারার জন্য মূলত দায়ী গত প্রায় ৬ মাস ধরে চলতে থাকা ডলার সঙ্কট। এই সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে বেশি সময় নিচ্ছে।

আমদানিকারকদের দাবি, পণ্য ছাড়াতে বিলম্বের কারণে তাদের শিপিং লাইনগুলোকে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফলে তারা এসব পণ্য বাজারে আসার পর বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

এই হতাশাজনক চিত্র এমন এক সময় দেখা দিয়েছে যখন মার্কিন ডলারের স্বল্পতার কারণে বেশ কিছু আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের এলসি খোলার পরিমাণ কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চিনি ও ভোজ্য তেলে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম অর্ধে অপরিশোধিত চিনির আমদানি ২২ শতাংশ বা ২ লাখ ৭ হাজার ৯৪৫ টন কমেছে।

আমদানিকারকদের আশঙ্কা, এ মাসের মধ্যে সার্বিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া রমজান মাসে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবেন না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মটর, আদা ও পেঁয়াজের আমদানি এর আগের বছরের তুলনায় ১০ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম অর্ধে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি ৪৭ শতাংশ, ছোলার আমদানি ২১ শতাংশ ও খেজুরের আমদানি ৩ শতাংশ কমেছে।

২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য এলসির পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ কমে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন হয়েছে। এর পাশাপাশি ছোলা আমদানি ৪৭ শতাংশ কমে ৭৫ হাজার ৩১৯ টন এবং খেজুর আমদানি ৩০ শতাংশ কমে ২১ হাজার ৯৮০ টন হয়েছে।

এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিম্নমুখী ধারার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে বাজারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য উল্লিখিত ৬ নিত্যপণ্যের এলসির পরিমাণ বাড়ানোর গুরুত্বের কথা বলে, ব্যাংকগুলোকে আমদানির পথ সুগম করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আলাদা করে রাখার ব্যাপারে সুপারিশ করে। 

তবে গতকাল ২ বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম না প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো তাদের আমদানি বিল মেটানোর জন্য মার্কিন ডলার আলাদা করে রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ভাষ্য, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশ দেয়নি।

তিনি বলেন, 'তবে গভর্নর সম্প্রতি ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের রমজান মাসে উচ্চ চাহিদার নিত্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।'

এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকারদের বৈঠকে এ বিষয়ে কিছু মৌখিক নির্দেশনা দিলেও এখনো তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

 

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank signals market-based exchange rate regime

The central bank will allow the exchange rate of the dollar to be determined by market forces

1h ago