আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল একই মুদ্রা প্রচলনের বিষয়টি বিবেচনা করছে

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা (বাঁয়ে) ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দেজ। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা (বাঁয়ে) ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দেজ। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় ২ অর্থনীতি ও ফুটবলের পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা একই মুদ্রা চালুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

রোববার আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র পেরফিলে প্রকাশিত এক যুগ্ম বিবৃতিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফের্নান্দেজ জানান, তারা ২ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আরও বড় আকারে সমন্বয় তৈরি করতে চান।

যৌথ বিবৃতিতে ২ রাষ্ট্রপ্রধান জানান 'আমরা ২ দেশের জন্য একই মুদ্রার প্রচলন বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রবাহকে সহজ করবে এবং সার্বিকভাবে এসব কার্যক্রম পরিচালনার খরচ ও বাইরের শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের দুর্বলতা কমাবে।'

এ মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে আর্জেন্টিনা পরিদর্শনে এসেছেন ব্রাজিলের লুলা।

এ উপলক্ষে বুয়েনোস আয়ার্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বাণিজ্যের জন্য ২ দেশ একই মুদ্রা ব্যবহার করলে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমবে।

গত বছর ডলারের বিপরীতে বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশই দুর্দশায় পড়েছে।

লুলা বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত যদি আমার হাতে থাকতো, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের সময় ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে সে দেশগুলোর মুদ্রা ব্যবহার করতাম'।

ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী ফেরনান্দো হাদাদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করার সময় এ ধরনের চিন্তাকে খুব একটা পাত্তা না দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জানান, আর্জেন্টিনার ডলার সঙ্কটের কারণে ২ দেশের বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং এ কারণেই নেতারা একটি সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা (বাঁয়ে) ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দেজ। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা (বাঁয়ে) ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দেজ। ছবি: এএফপি

'কিন্তু তার মানে এই না যে ব্রাজিলের মুদ্রা রিয়েল বাতিল হয়ে যাবে', যোগ করেন তিনি।

আলোচিত ২ দেশই মারকোসার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোটের অংশ। এতে প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৯১ সালে এই জোট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সদস্য দেশগুলোতে একই মুদ্রার চালুর বিষয়টি আলোচনায় আছে।

বিনিয়োগ উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ব্রাউন ব্রাদার্স হ্যারিম্যানের আন্তর্জাতিক বাজার কৌশল বিভাগের প্রধান উইন থিন জানান, বামপন্থি লুলার সঙ্গে ফার্নান্দেজের সম্পর্ক তার পূর্বসূরি বলসোনারোর চেয়ে উষ্ণ হওয়ায় এ আলোচনা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। 

গত বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ডলারের উচ্চ মূল্যের প্রভাব পড়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বের মূল মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। ফলে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়েছে এবং মার্কিন ডলারে হিসাব করা বিদেশী ঋণ পরিশোধও আগের তুলনায় ব্যয়বহুল হয়েছে।

তা সত্ত্বেও, বিনিয়োগকারীরা এই অঞ্চলে একই মুদ্রা প্রচলনের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

থিন বলেন, 'ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা, কারও জন্যেই এটি খুব বেশি উপকার আনবে না।'

বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাষ মতে, ২০২৩ সালে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশ।

তবে গত ২ দশকে আর্জেন্টিনার তুলনায় ব্রাজিলের অর্থনীতি প্রায় সব সময়ই ভালো অবস্থানে থেকেছে।

'ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি', যোগ করেন থিন।

২০২০ সালে নবম বারের মতো আর্জেন্টিনা তাদের সভরিন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। দেশটিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ মাসে নিত্যপণ্যের দাম গড়ে ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটি তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় আকারে খরচ করেছে এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ রয়েছে।

টেলিমার নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হাসনাইন মালিক এক গবেষণাপত্রে জানান, ২ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। ফলে ২ দেশের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগে সাফল্য আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, 'একই মুদ্রা চালুর জন্য অর্থনৈতিক নীতিমালা ও অর্থনীতির কার্যকারিতায় যে ধরনের সমন্বয় প্রয়োজন, সে পর্যায়ে যেতে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার এখনও বহুদূর পড়ি দিতে হবে'।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

4h ago