পানির নিচে গ্যারেজ!

আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে পানিতে নিমজ্জিত গ্যারেজ। ছবি: সংগৃহীত

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে গেলে নিজের অজান্তেই এমন কিছু ভাবনা চলে আসে যা এই সময়ের জন্য অভাবনীয়, কিছুটা অবাস্তবও বটে।

উড়ন্ত গাড়ি, টাইম মেশিন, রোবট পুলিশ কিংবা এরকম অনেক বিষয় নিয়েই কিন্তু আমরা ভবিষ্যতের শহরগুলো কল্পনা করে থাকি।

তবে ২০২৩ সালেই ঠিক এমনই এক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটেছে নেদারল্যান্ডসে। পানির নিচে বিশাল এক বাইসাইকেল গ্যারেজ বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে তারা।

গ্যারেজ বলতে আমাদের মনে হয় রাস্তার পাশে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি বা সাইকেল রাখা জায়গা। তবে আর যাই হোক, মাটির ওপরেই কোনো স্থান হওয়ার কথা, পানিতে নয়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যদি স্থান সংকুলান না হয় তাহলে আমাদের স্থলভাগের পরিবর্তে জলভাগে কী করে জায়গা করা যায় সে নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

এমন ভবিষ্যত ভাবনা থেকেই আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে পানিতে নিমজ্জিত ৭ হাজার বাইসাইকেল রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন এক গ্যারেজ তৈরি করেছে নেদারল্যান্ডস। ফেব্রুয়ারি মাসেই গ্যারেজটিতে ১১ হাজার সাইকেল পার্কিং করে রাখার সক্ষমতা অর্জন করবে।

প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বেশিরভাগ মানুষের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও নেদারল্যান্ডবাসীদের জন্য এটি একটি নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা। বর্তমানে যেখানে গাড়ির প্রয়োজনে নতুন শহর তৈরি করা হচ্ছে সেখানে বাইসাইকেল রাখার জন্য বিশেষ এই ব্যবস্থা অবাক করার মতোই।

নেদারল্যান্ডসে পানির নিচে গ্যারাজ নির্মাণ করার বিষয়টি নতুন নয়। ইউট্রেক শহরে এর চেয়ে বড় একটি বাইসাইকেল গ্যারাজ রয়েছে যার ধারণক্ষমতা প্রায় ১২ হাজার বাইসাইকেল। প্রতিদিন আর্মস্টার্ডামের প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন বাইসাইকেল ব্যবহার করে। ইউট্রেক শহরে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ।

আর্মস্টারডামে এই গ্যারেজ বানানো খুব সহজ ছিল না। প্রথমে কর্মীরা স্টেশনের সামনের এই বিশাল স্থানের পানি অপসারণ করেছেন। পরে গ্যারাজের ফ্লোর নির্মাণ করা হয়। সেইসঙ্গে বিশেষ বাল্ক স্থাপনার মাধ্যমে

গ্যারেজের সিলিং ডিজাইন করা হয় যার সম্পূর্ণ অংশই পানিতে নিমজ্জিত থাকবে।

রেল, ফেরি, ট্রাম ও বাস ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় দুলাখ মানুষ আর্মস্টার্ডাম রেলস্টেশন আসে। এদের মধ্যে অর্ধেক মানুষই বাইসাইকেল ব্যবহার করেন তাদের বাকি রাস্তাটুকু পৌঁছানোর জন্য।

এই বিশাল গ্যারেজে স্থাপনের আগে সাইকেল রাখার স্থানের সংকট ছিল। অনেকেই গ্যারেজে এসে সাইকেল রাখার জায়গা না পেয়ে কোনো বড় গাছের সামনে কিংবা রাস্তার পাশে সাইকেল লক করে রাখতেন। ফলে তাদের সাইকেল চুরি হবার আশঙ্কা থাকে।

এই পার্কিং গ্যারাজে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সাইকেল রাখার জন্য গ্রাহককে কোনো চার্জ দিতে হবে না। এরপর থেকে প্রতিদিনের জন্য দেড় ডলার করে চার্জ দিতে হবে।

সাইকেল রাখার স্থানে নীল রঙের সাইন ও সাইকেলের লোগো দেওয়া থাকে যাতে বেশ দূর থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া কোন স্থানে পার্কিং প্লেস খালি আর কোন স্থানে পার্কিং স্পেস নেই সেটিও বুঝতে পারা যায়। যদি সবুজ বাতি জ্বলতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে স্পেস খালি রয়েছে আর যদি লাল বাতি জ্বলে তাহলে বুঝতে হবে কোনো স্পেস খালি নেই।

তবে ভারী ধরনের সাইকেল রাখার জন্য এই গ্যারাজে কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ইলেকট্রনিক বাইক চার্জ করার জন্যও কোনো চার্জিং পয়েন্ট রাখা হয়নি। চেক ইন বা আউটের জন্য মোবাইল, ডেবিট কার্ড যুক্ত করা যায়না। তাদের নিজস্ব সিস্টেমের মধ্য দিয়েই কেবল সাইকেল রাখা যাবে।

স্টেশনের পাশে এই গ্যারেজ বানানোর কাজ ২০১৯ সালে শুরু হলেও এর পরিকল্পনা হয়েছিল অনেক আগে। সময়ের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বাইসাইকেল চালানোর উদ্যোগ এখন বেশ প্রশংসনীয়। সাইকেল রাখার মনোরম পরিবেশ মানুষের মাঝে সাইকেল ব্যবহারের আগ্রহ বাড়াতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য ভার্জ

Comments

The Daily Star  | English
Binimoy platform suspended by Bangladesh Bank

BB suspends Binimoy over irregularities

During the previous AL govt, it was developed by the IDEA under the ICT Division at a cost of Tk 65 crore.

11h ago