ইউক্রেন যুদ্ধের আগুন কি ইরানেও ছড়ালো

ইরানে ড্রোন হামলা
ইস্পাহানে সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলা। ছবি: তেহরান টাইমস

'শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু'—এই বাংলা প্রবাদের প্রতিফলন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে হামেশাই দেখা যায়। এবার 'শত্রুর বন্ধু আমারও শত্রু' এমন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেল ইরানের ইস্পাহানে এক সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার পর।

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত ২৮ জানুয়ারি ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানে সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলা হয়েছে।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলাকে 'ব্যর্থ' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে—'২৮ জানুয়ারি স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়ার্কশপে ব্যর্থ হামলা চালানো হয়েছে।'

মন্ত্রণালয়ের বার্তায় জানানো হয়, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ড্রোন ভূপাতিত ও ২ ড্রোন জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। এই 'ব্যর্থ' হামলায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ওয়ার্কশপের ছাদে 'সামান্য ক্ষতি' হয়েছে।

ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে।

ঘটনার পর ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ না করে শীর্ষ সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে—ইরানে হামলার পেছনে 'ইসরায়েলের হাত' আছে।

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমও তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলাকে 'সফল' আখ্যা দিয়ে এর জন্য তেলআবিবকে 'কৃতিত্ব' দিয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি বলেও প্রতিবেদনগুলোয় উল্লেখ করা হয়।

কাছাকাছি সময়ে ইরানে আরেকটি ঘটনা ঘটে। দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কাছে এক শিল্পাঞ্চলে তেল শোধনাগারে আগুন লেগেছে বলে জানায় ইরানের সংবাদমাধ্যম। দমকল বাহিনীর সদস্যদের আগুন নেভানোর চেষ্টা ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়। বলা হয়, আগুনের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

গত ৩০ জানুয়ারি ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়—রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ইরানে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

মারিয়া বলেন, এ ধরনের ভয়ঙ্কর হামলা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি-স্থিতিশীলতা 'নষ্ট' করতে পারে। 'এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণহীন উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার যেকোনো অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।'

শত্রুদের জন্য রুশ মুখপাত্রের বার্তা—এমন হামলায় যারা খুশি হয়েছেন তারা যেন মনে রাখেন ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা বৃথা।

এসব হামলায় ইরানের শত্রুরা 'বেজায় খুশি' তা বলাই বাহুল্য।

গত ৩০ জানুয়ারি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে—ইউক্রেন জানে না কারা ইরানে হামলা চালিয়েছে, তবে রুশ 'আগ্রাসন'কে সমর্থন দেওয়ায় এসব হামলাকে ইরানের জন্য 'আইনসম্মত শাস্তি' হিসেবে মনে করছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকেই একটি ইরানি প্রবাদ স্মরণ করে দিয়েছে। প্রবাদটির বাংলা দাঁড়ায় 'অন্যের জন্য কবর খুঁড়লে সেই কবরে নিজেকেই পড়তে হয়'।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেনকো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, 'ইউক্রেন সবসময় ইরানকে সতর্ক করেছে। আগ্রাসনকে সমর্থনের কুফল রাশিয়াকে সহায়তা করার কুফলের চেয়েও ভয়াবহ হবে।'

ঘটনা এখানেই থামেনি। ইরানে হামলার ঘটনায় ইউক্রেনে 'উচ্ছ্বাস' প্রকাশ করা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্ললোদিমির জেলেনস্কির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিখাইল গদলিয়াক টুইটারে বলেছেন, 'ইরানে বিস্ফোরণের রাত—ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও তেল শোধনাগারে হামলা। ইউক্রেন তোমাদের সতর্ক করেছিল।'

এরপর তেহরানে ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে সেই টুইটের ব্যাখ্যার জন্য তলব করা হয়। ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় তেহরান প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানায় রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।

ইউক্রেনের অভিযোগ—ইরান রাশিয়াকে শত শত ড্রোন সরবরাহ করেছে। সেসব ড্রোন দিয়ে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বেসামরিক স্থাপনা ও বাসভবনে হামলা চালাচ্ছে। ইরানের দাবি—সেসব ড্রোন ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়ায় সরবরাহ করা হয়েছিল।

এ কথা সবাই জানেন যে, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান ক্রমাগত চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হচ্ছে। দেশটির শীর্ষ নেতাদের একে একে হত্যার পর বেছে নেওয়া হয় পরমাণুবিজ্ঞানীদের।

'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে দেশটির বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে প্রতিবেশী ইরাকের রাজধানী বাগদাদে হত্যা করা হয়।

ইরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রসহ অন্যান্য সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তেল শোধনাগারে প্রায় প্রতি বছরই হামলার তথ্য বিশ্ব গণমাধ্যমে আসে। এসব হামলার অধিকাংশের 'দায়' পড়ে ইসরায়েলের ওপর।

এবার ইস্পাহানে হামলায় ইসরায়েলের 'সম্পৃক্ততার' কথা পশ্চিমের গণমাধ্যমে বলা হলেও গত ৩০ জানুয়ারি ইরানের সরকারি সংবাদপত্র তেহরান টাইমস কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছে—'… জবাবের অপেক্ষা করো'।

একই দিনে সংবাদমাধ্যমটি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃব্যাংক টেলিযোগাযোগ বাড়াতে সমঝোতা চুক্তি সইয়ের সংবাদ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞার পরও দেশ ২টি নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইউরোপে চলমান যুদ্ধকে ঘিরে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে তেহরান ও মস্কো দিচ্ছে সখ্যতার সংবাদ। তাদের এমন ঘনিষ্ঠতা দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে—তাহলে কি ইউক্রেন যুদ্ধের আগুন ইরানেও ছড়িয়ে পড়ছে?

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

2h ago