বাণিজ্য

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

এক সময় সংসারের কাজের ফাঁকে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার গৃহবধূ কেয়া ইসলাম কারচুপির কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। এক দশকের ব্যবধানে তার সেই ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখন বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।
পাবনা বিসিক
পাবনা বিসিকের মেলায় উদ্যোক্তারা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

এক সময় সংসারের কাজের ফাঁকে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার গৃহবধূ কেয়া ইসলাম কারচুপির কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। এক দশকের ব্যবধানে তার সেই ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখন বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।

নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন সারা বুটিক ফ্যাশন। এ কারখানায় কাজ করছে শতাধিক কর্মী। এ ছাড়াও বাড়িতে বসেই অনেকে কাজ করেন সারা বুটিকের জন্য।

কেয়ার মতো শত নারী উদ্যোক্তা এখন পাবনার সব এলাকায়। কেউ প্রয়োজনের তাগিদে, কেউ শখের বশে গৃহস্থালি পর্যায় থেকে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করলেও, এখন তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে জেলার সার্বিক আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

কেয়া ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার কারখানায় কারচুপির শাড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভারসহ বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি হচ্ছে। একসময় ছোট পর্যায়ের কাজের অর্ডার নিয়ে বাড়িতেই ব্যবসা শুরু করেছি। এখন আমার কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।'

পাবনা বিসিক
পাবনায় বিসিকের মেলায় ক্রেতাকে পোশাক দেখাচ্ছেন এক উদ্যোক্তা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

তিনি জানান, অন্যান্য স্থান থেকে কাজের অর্ডার পাওয়ার পর ডিজাইন অনুযায়ী তা তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২টি শো রুমে তাদের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রতি মাসে তার আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা।

কেয়া আরও জানান, একসময় পরিবারে সহযোগিতা করবেন ভেবে বাড়িতে কাজ শুরু করেন। এখন তার উপার্জনই পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। পরিবারের সবাই তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন।

শুধু কেয়া নন, পাবনার রাধানগর গ্রামের নাজিরা পারভিন গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এনজিও কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

তার কর্ম এলাকা পাবনার নাজিরপুর গ্রামে একসময় বাঁশ-বেতের কারিগরদের আধিপত্য ছিল। কালের বিবর্তনে পণ্যের দাম না পাওয়ায় অনেকেই ওই কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শেখা বিদ্যা দিয়েই ওই এলাকার ২ শতাধিক নারী এখনো বাঁশ-বেত-কাঠ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় ও সৌখিন পণ্য তৈরি করছেন।

নাজিরা পারভিন গ্রামের অবহেলিত নারীদের তৈরি করা পণ্য বিপণন করতে তার সংস্থার মাধ্যমে কাজ করছেন। নাজিরার দেখানো পথে ওই গ্রামের নারীরা এখন স্বাবলম্বী।

পাবনা বিসিক
বাঁশ-বেতের প্রয়োজনীয় ও সৌখিন পণ্য হাতে এক উদ্যোক্তা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পাবনা শহরের অনন্ত এলাকার ইরানি সুলতানা রিমার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় প্রায় ১০ বছর আগে। ২ সন্তান নিয়ে একরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

রান্নার কাজে পারদর্শী হওয়ায় অনেকের জন্য রান্না শুরু করেন তিনি। একসময় এটাকে অবলম্বন করেই তার উপার্জনের পথ তৈরি হয়।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি নিজে সযত্নে রান্না করে অর্ডার অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন। এ কাজে তার ছেলে-মেয়েরা তাকে সহযোগিতা করে।

করোনার সময় অনলাইন অর্ডার জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এখন তার রান্না খাবারের ব্যবসা অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে পাবনায় ছড়িয়ে পড়েছে।

রিমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে যখন রান্নার কাজ শুরু করি, তখন অনেকেই কটু কথা বলেছেন। তারা কেউ অভাবের সময় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। তাই সমালোচনা পেছনে ফেলে রান্না খাবার বিক্রির কাজ শুরু করি।'

এখন তার সংসার ভালো চলছে, লেখাপড়া করছে তার সন্তানরা।

সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর অনুমতি নিয়ে ঘরে অবসরের সময় কেক-পেস্ট্রি তৈরি করে সরবরাহ শুরু করেন গৃহবধূ তৃণা বিশ্বাস। প্রথমে শখের বশে বানালেও এখন ব্যবসায়িকভাবে কেক-পেস্ট্রি-আচার তৈরি করে সংসারের উন্নতি করেছেন।

পাবনা বিসিক
বিসিকের মেলায় খাবারের স্টল। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পাবনা বিসিকের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনায় গত কয়েক বছরে গৃহস্থালি পর্যায় থেকে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র উদ্যোগের মধ্যে অনেকগুলো বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছে, যা জেলার সার্বিক আর্থিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে।'

তিনি জানান, জেলার প্রায় ২০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক বিনিয়োগকারী আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ঘর-গৃহস্থালি পর্যায় থেকে কাজ শুরু করে এখন সফল।

ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্প বিকাশের পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাজে সহায়তার জন্যও কাজ করছে বিসিক।

বিসিক ব্যবস্থাপক ডেইলি স্টারকে জানান, পাবনা বিসিক ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে প্রায় দেড় হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এসব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করছেন।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের সব উদ্যোক্তাদের নিয়ে পাবনা বিসিক সম্প্রতি ১০ দিনের উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করে। জেলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা মেলায় তাদের পণ্য নিয়ে আসেন।

উদ্যোক্তারা জানান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও পুঁজির সংস্থানের সুযোগ বাড়লে এমন উদ্যোগ আরও বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

5h ago