‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের লড়াইকে রাষ্ট্র সংস্কারের লড়াইয়ে পরিণত করুন’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বান
ছবি: সিরাজুল ইসলাম রুবেল/স্টার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের লড়াইকে রাষ্ট্র সংস্কারের লড়াইয়ে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা প্রীতম দাশের কারামুক্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে আজ শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান।

সংবর্ধনা সভায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বলেন, 'রাষ্ট্র সংস্কার না করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল, নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালে রাখা; মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা; পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা; লুটপাট-পাচার নিয়ন্ত্রণ করা; সর্বোপরি মানুষের জান- জবান-সম্মানের অধিকার নিশ্চিত করা- দেশের একটা কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব না। সরকার সেটা খুব ভালো করেই জানে। তাই তার লুটপাট আর পাচারের সুযোগ নিশ্চিত রাখার জন্য সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের নেতাদের ওপর হামলা-মামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি হামলা, মামলার ঘটনায় রাষ্ট্র সংস্কারের নেতারা আরো বেশি উজ্জীবিত, শক্তিশালী হয়ে রাজপথে ফিরে এসেছে। তারা রাষ্ট্র সংস্কার করেই এসব হামলা-মামলার জবাব দেবে।'

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমালোচক এবং শিক্ষা আন্দোলন সংগঠক রাখাল রাহা বলেন, 'এই সরকার তার প্রয়োজনে যে কাউকে খুন বা গুম করতে দ্বিধা করে না। এই ঝুঁকি জেনেও যারা পরিষ্কার নিয়তে এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় থাকতে পারবে তাদের জয় আসবে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই লড়াইয়ে পথে আছে, সফলতা আসবে।'

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ স্বাধীন হতে পারেনি। দেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে এই রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো পাল্টানোর যুদ্ধে নামতে হবে।'

সংবর্ধনায় প্রীতম দাশ বলেন, 'জেল জুলুম হুলিয়া দিয়ে জনমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই বন্ধ করা যাবে না। আমরা রাস্তায় আছি রাস্তায় থাকব। চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন, বন্যার্তদের সাহায্য, করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো থেকে এই দীর্ঘ লড়াইয়ে সংগঠনের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের মানুষ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।'

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন বলেন, 'বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নেপথ্যে সরকার ও তার দলের লোকজন। জনগণের মধ্যে বিভক্তি বাড়ানোর জন্য সরকার নিজেই এসব সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করে। এই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল মডেল বা প্রীতম দাশ যে নজির সৃষ্টি করেছে তা আগামীতে বাংলাদেশকে পথ দেখাবে।'

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দ্রুত বাতিল করুন। অন্যথায় এই আইনে আপনাদেরই বিচার হবে। মানুষ ক্ষমতায় চিরদিন থাকে না, আমরা অতীত ইতিহাসে দেখেছি। আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার দুর্ব্যবহার যেখানে জনমনে ভয়ের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে, সেখানে প্রীতম দাশদের দুঃসাহস আমাদের বিভেদ ভুলে এক সারিতে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার সাহস যোগায়।'

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, 'বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতি ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক আলাপ ফিকে হয়ে গেছে। আগামীতে মানুষের মুক্তির জন্য আপনি এই রাষ্ট্র বহাল রাখতে চান নাকি এই ব্যবস্থার সংস্কার চান এই ফয়সালা করতে হবে। প্রীতম দাশ, দিদারুল ভুঁইয়ারা যেমন জেল জুলুমের পরেও আরও দুর্বার গতিতে লড়াইয়ে মাঠে ফিরেছে, এইটা রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতির শক্তি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা পাচারের সংস্কৃতির বিপরীতে পাচার বন্ধ করার ব্যবস্থা, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিপরীতে মর্যাদার বাংলাদেশ, এক ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার বিপরীতে জবাবদিহিতার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।'

তিনি এই লড়াইয়ে সারাদেশের সব মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনিরুদ্দিন পাপ্পু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া, দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল ইসলাম নয়ন, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহ আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ঢাকা জেলা কমিটির সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সমন্বয়ক এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম মামুন প্রমুখ। অনুষ্টানে কবিতা আবৃত্তি করেন রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের নেত্রি ও কবি উম্মে হাবীবা মায়া এবং এক্টিভিস্ট সজীব তুষার। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এক্টিভিস্ট মারজিয়া প্রভাসহ বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago