মুক্তচিন্তার পথিক: হামিদা হোসেন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হামিদা হোসেন যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার দিকে বিশেষ নজর দেন।
হামিদা হোসেন। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন হামিদা হোসেন

হামিদা হোসেন একজন অগ্রগামী মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার কর্মী। ১৯৩৬ সালে হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া হামিদা হোসেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তার অঙ্গীকারবদ্ধতা এবং মানবাধিকার, লিঙ্গসমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের জন্য সুপরিচিত।

হামিদা হোসেন, কামাল হোসেন ও রেহমান সোবহানের সমন্বিত উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'ফোরাম' চালু হয়। এই প্রকাশনা বাঙালির জাতিগত আকাঙ্ক্ষা, সামরিক ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণার বিরুদ্ধাচরণ এবং সর্বোপরি, পল্লী অঞ্চল ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হামিদা হোসেন যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার দিকে বিশেষ নজর দেন। ১৯৭৪ সালে তিনি স্থানীয় হস্তশিল্পের প্রচারণা ও বাণিজ্যিকীকরণের উদ্দেশ্যে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কারিকা- বাংলাদেশ হস্তশিল্প সমবায় ফেডারেশন লিমিটেডের গোড়াপত্তন করেন।

একইসঙ্গে হামিদা হোসেন বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেন, যার মধ্যে আছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় নিয়োজিত শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম।

হামিদা হোসেন তার মানবাধিকার কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সম্প্রসারিত করেছেন। ১৯৭৫ সালে মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সম্মেলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ উইথ ওম্যান ফর আ নিউ এরা (ডন) নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতার ভূমিকা পালন করেন এবং এশিয়া প্যাসিফিক ফোরাম অন ওম্যান, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এছাড়াও তিনি সিইডিএডব্লিউ চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রণীত ছায়া প্রতিবেদনে সহ-লেখকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ড. হামিদা হোসেন নারীদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা, নারী শ্রমিকদের দুর্দশা এবং হস্ত ও কারুশিল্প খাত নিয়ে বিস্তৃত আকারে লিখেছেন। তার পিএইচডি থিসিস বাংলার পোশাক উৎপাদনের ইতিহাস এবং কারিগরদের জীবন ও কর্মপরিবেশের ওপর একটি মৌলিক কাজ হিসাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। পরবর্তীতে এই থিসিস বই আকারে 'কোম্পানি উইভারস অব বেঙ্গল' নামে প্রকাশিত হয়।  

ডেইলি স্টার হামিদা হোসেনকে চিন্তার স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা, সামাজিক ন্যায়বিচারের চ্যাম্পিয়ন, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং নারী ক্ষমতায়নের সমর্থক হিসেবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য তার নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে।

Comments

The Daily Star  | English

Secondary schools to reopen Saturday, primary on Sunday

Academic activities at all secondary-level educational institutions will resume on Saturday, the Ministry of Education said today

3h ago