নির্মমতায় মন ভেঙে গেছে, স্বপ্ন এখনো আছে: ফুলপরী

মা-বাবার সঙ্গে ফুলপরী। তাদের সম্মতি নিয়ে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবি: স্টার

'অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সুযোগ পেয়ে স্বপ্নটাকে আরও বড় করে দেখতে শুরু করি। ক্যাম্পাস নিয়ে যখন নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করি, তখনই এমন আঘাত আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে।'

আজ সোমবার দুপুরের পাবনায় নিজ বাড়ি থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলেন ফুলপরী।

তিনি বলেন, 'শারীরিক নির্যাতনের ক্ষত খুব বেশি না হলেও বড় আপুদের কাছ থেকে এমন পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হবো—এটা কখনো ভাবিনি। তাই মন ভেঙে গেছে।'

'স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে ভয় আর আতংক আমাকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয় আর আতংক থাকলেও লেখাপড়া নিয়ে স্বপ্ন ভেঙে যায়নি, স্বপ্ন এখনো আছে। স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে আমি এখন আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাই', যোগ করেন তিনি।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ফুলপরী ঘটনার পর তার বাড়িতে ফিরে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম ইসলামের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা থেকে ভোররাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে।

এই ঘটনায় শুনানির জন্য ইতোমধ্যে ফুলপরী তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন। আজ অভিযুক্ত ২ ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে আনা হয়েছে।

সেইসঙ্গে ডাকা হয়েছে ফুলপরীকেও।

আজ দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'হঠাৎ করেই স্যাররা কল দিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে বললেন। তাই যাচ্ছি।'

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

ফুলপরী বলেন, 'আমি সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা চাই। সবাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাদের কেউই যেন আমার মতো হয়রানির শিকার না হয়।'

তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন, যেন 'আর কেউ এ ধরনের নোংরা ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।'

ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নিজে নিরক্ষর মানুষ। নিরক্ষরতার যন্ত্রণা আমি বুঝি। তারই আমার ৪ সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাতে চাই।'

তার বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির সন্ধানে রয়েছেন, বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, ছোট মেয়ে ফুলপরী এবং ছোট ছেলে ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

আতাউর বলেন, 'অনেক কষ্ট করি। কিন্তু ৪ সন্তানকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই, মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।'

Comments

The Daily Star  | English

CA approves draft Anti-Terrorism Ordinance

Draft includes provision to ban an entity's activities, restrict terrorism-related content online

23m ago