নৌকাঘাটে পুলিশের লাইব্রেরি

কুড়িগ্রাম পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, নৌকা ঘাটে লাইব্রেরি
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে যাত্রাপুর নৌকা ঘাটে লিটল ফ্রি লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ছেন চরের মানুষ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষদের বই পড়তে অভ্যস্ত করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। নৌকাঘাট ও চরাঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছে 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' লাইব্রেরি। ফলে, এই অঞ্চলের মানুষ এখন নৌকা ঘাটে অপেক্ষার সময় বই পড়তে পারছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, জেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বিভিন্ন নৌকাঘাট ও চরাঞ্চলে ২০টি 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি লাইব্রেরিতে ২০ ধরনের বই আছে। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব দিয়ে এসব লাইব্রেরি পরিচালনা করা হচ্ছে।

জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামের উদ্যোগে এই 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরাঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে লিটল ফ্রি লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই লাইব্রেরি চরাঞ্চলের মানুষকে বই পড়তে অভ্যস্ত করছে। তারা নৌকা ঘাটে অপেক্ষার সময়কে বই পড়ার কাজে লাগাচ্ছেন। এতে তারা উপকৃত হচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এমন উদ্যোগ দেশে প্রথম।'

'চরাঞ্চলের মানুষের দাবি অনুযায়ী লিটল ফ্রি লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ক বই সংযোজন করা হবে। এছাড়া শিশু বিষয়ক বইও সংযোজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।

ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর রোলাকাটা এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী (৬৭) পেশায় একজন কৃষক। তাকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটে যাতায়াত করতে হয়। চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। নৌকার জন্য যাত্রাপুর নৌকা ঘাটে অপেক্ষা করতে হয় এক থেকে দেড় ঘণ্টা। অপেক্ষার এই সময়কে এখন তিনি বই পড়ায় ব্যয় করছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি নৌকা ঘাটে বসে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। যাত্রাপুর নৌকা ঘাটে পুলিশের 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' আমাকে বইপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এই লাইব্রেরিতে এখনো কৃষি বিষয়ক বই সংযোজন করা হয়নি। আমাদের জন্য কৃষি বিষয়ক বই বেশি প্রয়োজন।

যাত্রাপুর নৌকা ঘাটের ক্ষুদে ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, 'আমার দোকানের সামনে জেলা পুলিশের 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' স্থাপন করা হয়েছে। এখানে সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ ও গুণী ব্যক্তিদের জীবনী বিষয়ক বই আছে। নৌকার জন্য চরের মানুষকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তখন মানুষ লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়েন। প্রতিদিন ২০-২৫ জন মানুষ বই পড়ছেন। তারা বই পড়ার পর বই লাইব্রেরিতে রেখে দেন। এই লাইব্রেরি আমাদের বই পড়ায় অভ্যস্ত করছে।'

রমনা ঘাটে আসা কলেজশিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম (২০) বলেন, 'জেলা পুলিশের উদ্যোগের কারণে চরের মানুষ বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। চর এলাকায় সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো লাইব্রেরি নেই। এছাড়া চরের মানুষের বই কিনে পড়ার সামর্থ্যও নেই। লিটল ফ্রি লাইব্রেরি আমাদের বইপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Hilsa fish production in Bangladesh

Hilsa: From full nets to lighter hauls

This year, fishermen have been returning with lesser catches and bigger losses.

14h ago