জলবসন্ত কেন হয়, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

প্রতীকী ছবিটি সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে নেওয়া

শীতের শেষে বসন্তের আগমনে বাংলাদেশে জল ও গুটি—এই ২ ধরনের বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত একসময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জীবনহানিকর মারাত্মক গুটি বসন্ত ৪ দশক আগে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছে। তবে জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়েছে। বসন্ত ঋতু ছাড়া অন্য সময়েও এই রোগটি দেখা গেলেও তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা হিসেবে নগণ্য।

জলবসন্ত জীবনহানিকর মারাত্মক কোনো রোগ নয়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সীদের এই রোগ হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। পুনরায় সংক্রমণের কারণে অনেক সময় হারপিজ জোস্টার নামে আরেকটি রোগ হয়ে থাকে।

কী কারণে হয়

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি সংক্রামক রোগ, যা ভেরিসেলা জোস্টার নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে।

কীভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, ত্বকের সংস্পর্শ, ব্যবহৃত পোশাকের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার ২ দিন আগে থেকে শুকিয়ে যাওয়া ফুসকুড়ির খোসা থেকেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি ও ফুসকুড়ির খোসা বাতাসে বাহিত হয়েও এই রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটি ছড়াতে শুরু করে।

লক্ষণ

ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে। ত্বকে প্রথমে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে, যা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার ২-৩ দিন আগে থেকেই শরীর ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেটব্যথা হতে পারে। লালচে ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়। ফুসকুড়িতে পানি জমে, যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়। কাশি ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে। সাধারণত ২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত এই রোগের স্থায়িত্ব হয়ে থাকে।

জটিলতা

আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিরোধ

আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে। যেকোনো বয়সীরা জলবসন্তের টিকা নিতে পারেন। একবার আক্রান্ত হলে সাধারণত পুনরায় সংক্রমণ হয় না।

চিকিৎসা

ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন ও পরামর্শ মেনে চললে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন: জ্বর বা চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। আবার রোগের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নাশক ওষুধও দেওয়া হয়ে থাকে।

মনে রাখবেন জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই সাধারণ তবে ছোঁয়াচে রোগ। সাবধানতা অবলম্বন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই এ রোগ থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Admin officials, law enforcers involved

Finds probe body; ACC preliminary report names 42 perpetrators

1h ago