পাবনায় লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ আমন সংগ্রহ

আমন ধান চাল সংগ্রহ
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সংকট মোকাবিলায় খাদ্যের মজুদ বৃদ্ধিতে সরকার গৃহীত আমন সংগ্রহ অভিযান সারাদেশে মোটামুটি সফলভাবে শেষ হলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে পাবনায়।

মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদাসীনতা আর সিন্ডিকেট ব্যবসার কারণে সরকারের সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে গেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। 

প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ সংগ্রহ অভিযানে সারাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও পাবনায় মাত্র ২৮ শতাংশ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। 

তবে সারাদেশের মতো পাবনাতেও ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

পাবনায় চাল সংগ্রহে নাজুক অবস্থার কারণে খাদ্য বিভাগ ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৪৮৪টি মিল মালিককে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে। 

পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার ১১টি সরকারি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে ১২ হাজার ৭৮৬ মেট্রিক টন চাল আর ৩ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। 

৪২ টাকা কেজি দরে চাল আর ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কেনার জন্য দাম নির্ধারণ করে ১৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে চলতি মাসের ৭ তারিখ (৭ মার্চ) পর্যন্ত এ সংগ্রহ কার্যক্রম চলে।

প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ সংগ্রহ অভিযান শেষে পাবনায় মাত্র ৩ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। মিলারদের অনাগ্রহে নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২৮ শতাংশের বেশি চাল কেনা সম্ভব হয়নি বলে জানায় খাদ্য বিভাগ।
 
এর আগে চাল কেনার জন্য জেলার ৮৭টি চাল কল আর ৫টি অটো রাইচ মিল ৩ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের চুক্তি করলেও শেষ পর্যন্ত কয়েকটি মিল চাল সরবরাহ না করায় চুক্তি অনুযায়ী চালও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
 
তবে সারাদেশের মতো পাবনাতেও ধান সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ না থাকায় ধান সংগ্রহ করা যায়নি বলে জানায় খাদ্য বিভাগ।
 
পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও অনেক চালকল মালিক দাম কম দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেনি।

মিলারদের অনাগ্রহের কারণেই মূলত সরকারের সংগ্রহ অভিযান পাবনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। 

চাল সংগ্রহ অভিজানের এমন নাজুক পরিণতির কারণে পাবনা জেলা খাদ্য বিভাগ ইতোমধ্যে জেলার ৪৬৯টি হাস্কিং মিল ও ১৪টি অটো রাইচ মিলকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েও যারা সরকারের সংগ্রহ অভিযানে সাড়া দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পাবনা জেলা খাদ্য বিভাগ।
 
এদিকে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে মিলারদের এমন অনিহার ব্যাপারে জানতে চাইলে পাবনা জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলি বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চালের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে লোকসানের ভয়ে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হয়নি।
 
বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি লেগে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি বলে জানান তিনি। পাবনার শীর্ষ স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলি নিজেই এ বছর চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হননি বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
 
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার এ বছর ৪২ টাকা কেজি দরে চাল আর ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। যা বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হয়েছে। তবে মিলাররা বলছেন, এ দামে সরবরাহ করা লোকসানের শামিল।
 
এদিকে পাবনায় চাল কল মালিকরা যখন লোকসানের অজুহাত দিয়ে চাল সরবরাহ করতে অনিহা প্রকাশ করেছে তখন পাশের জেলা সিরাজগঞ্জে চাল সংগ্রহ প্রায় শতভাগ অর্জন করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার খাদ্য বিভাগ।
 
সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এস এম সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমন মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নির্ধারিত সময়ে ৯ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।'
 
মিলাররা প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও বারবার নোটিশ দিয়ে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

এদিকে সিরাজগঞ্জে মিলাররা পারলেও পাবনায় কেন দামের অজুহাতে মিলাররা চাল সরবরাহ করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলি বলেন, 'দূরত্বের কারণে পাবনাতে ধানের পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যাওয়ায়া চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।'

তবে মিলারদের এসব দাবি অস্বীকার করে খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র প্রতিবছর সংগ্রহ অভিযানের সময় সরবরাহের বরাদ্দ করিয়ে থাকে। অনেক সময় যাদের মিল নেই এমন মালিককেও চাল সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অনেকেই সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে আগ্রহ দেখায় না। ফলে গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও পাবনায় সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে গেছে। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জানান, সব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেই সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়, কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরবরাহের বরাদ্দ নিয়ে চাল সরবরাহ না করলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।
 
গত বোরো মৌসুমে প্রায় অর্ধশতাধিক মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, খাদ্য বিভাগের অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে আমন মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলেও পাবনায় সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে এখনো পর্যাপ্ত খাদ্য শস্য মজুত রয়েছে ফলে আপদকালীন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না বলে জানান এ খাদ্য কর্মকর্তা।  
 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago