হত্যা মামলার আসামির জুয়েলারি দোকান উদ্বোধনে দুবাইয়ে সাকিব

আরাভ
পলাতক আসামি আরাভ ওরফে রবিউল (বামে) ও সাকিব আল হাসান (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

দুবাইয়ে আজ বুধবার আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করবেন বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। জুয়েলারি দোকানটির মালিক হত্যা মামলার পলাতক আসামি বলে জানা গেছে।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (খিলগাঁও জোন) শহিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি।

এই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে।

পলাতক রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে।

তিনি আপন, সোহাগ, হৃদয় নামেও পরিচিত বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে।

২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পরিদর্শক মামুন। হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান।

রবিউল তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণ করার জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন।

২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট ইউ ৪৯৮৫৩৮৯ এর একটি কপি পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান বলে উল্লেখ করা হয়। পাসপোর্টে তার স্ত্রীর নাম লেখা হয়েছে সাজিমা নাসরিন।

পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরাভের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০ সালের ২৭ জুলাই শেষ হবে।

আরাভ খানের ঘনিষ্ঠ একজন ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন যে তারা তাকে আপন আরাভ নামে চেনেন এবং তার জন্ম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। আরাভের নামে বাংলাদেশে মামলা থাকার কথাও জানান তিনি।

আরাভ এখন দুবাইয়ে থাকেন। আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর এই পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে।

সম্প্রতি দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনের সংবাদ প্রচার হলে, এই পলাতক আসামির নাম প্রকাশ্যে আসে। আরাভ খান ওরফে রবিউলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির আজ বুধবার দুবাইয়ের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় উদ্বোধন হওয়ার কথা আছে।

সাকিব আল হাসান ফেসবুকে একটি ভিডিওতে আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের শোবিজ জগতের বেশ কয়েকজন তারকার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা আছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

পরিদর্শক মামুন হত্যা

২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমতুল্লাহ নামের একজনের আমন্ত্রণ পেয়ে বনানীর একটি বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান পুলিশ পরিদর্শক মামুন।

পরে পুলিশের তদন্তে দেখা যায়, মামুন আসলে ফাঁদে পড়েছিলেন। তাকে ফ্ল্যাটের নিয়ে বেঁধে, স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মামুন মারা যান।

ওই হত্যা মামলার আসামিরা হলেন-রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসা।

কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না ডেইলি স্টারকে জানান, রবিউল এক পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি। তিনি আরও দুটি মামলার আসামি বলেও উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান।

পুলিশ রবিউলের সন্ধানে বিভিন্ন সময় ওই ইউনিয়নের আশুটিয়া গ্রামে যায়।

মাজহারুল জানান, আড়াই মাস আগে তিনি ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গেলে রবিউল তাকে রিয়াদে ডেকে দেখা করেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রবিউল আমাকে বলেছিল যে সে দুবাইয়ে থাকে। সেখানে তার একটি জুয়েলারি দোকান আছে। আমি বিশ্বাস করিনি, কারণ গ্রামের বাড়িতে তাদের তেমন কোনো সম্পত্তি নেই।'

রবিউলের নামে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিল কে

রবিউলের পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে জনৈক মো. আবু ইউসুফ ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ইউসুফ এতে রাজি হয়।

একপর্যায়ে রবিউল ইউসুফের পরিবারকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে ইউসুফ আদালতে আবেদন করেন যে তিনি আসলে আবু ইউসুফ, হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি রবিউল নন।

আইনজীবী আদালতকে জানান, তার মক্কেল ইউসুফ সম্ভবত অর্থের প্রলোভনে বা হুমকি পেয়ে এমন অপরাধ করেছেন।

এরপর আদালত ডিবিকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেন।

তদন্তে ডিবি জানতে পারে, ইউসুফ চাঁদপুরের কচুয়া থানার আইনপুরের বাসিন্দা এবং তার বাবার নাম মো. নুরুজ্জামান ও মায়ের নাম হালিমা বেগম।

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

4h ago