অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগ বিচারকের বিরুদ্ধে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মঙ্গলবার দুপুর ৩টা থেকে স্কুলের সামনের রাস্তা বন্ধ করে কয়েক দফায় প্রতিবাদ জানিয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে এক বিচারক তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন এমন অভিযোগে স্কুলের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টা থেকে স্কুলের সামনের রাস্তা বন্ধ করে কয়েক দফায় প্রতিবাদ জানিয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছিল।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, সব শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে কখনোই শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার।

গতকাল সোমবার রাতে স্কুলের একটি ফেসবুকে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট লেখে বিচারকের মেয়ে। এতে কয়েকজন সহপাঠী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায়।

আজ সকালে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে এসে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন ৩ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবককে শিক্ষকের মাধ্যমে ডেকে আনেন। ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে 'অপমানজনক কথা' বলা হয়েছে এমন দাবি করে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন তিনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে মামলার হুমকি দেওয়ার এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন ওই বিচারক। সেসময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন সেই বিচারকের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসান।

জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা শিক্ষক মোবাশ্বেরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, 'এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলা বাধে। আজকে সকাল ১১টায় ওই বিচারক এসে কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের বলেন যে এই শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এসব লিখলে সাইবার ক্রাইমের মামলা হতে পারে সেটা কি তোমরা জানো? এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীর মা এসে বিচারকের পায়ে ধরে ক্ষমা চান।'

এদিকে বিচারকের মেয়ের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, বিচারকের মেয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় না, এটা নিয়ে তাকে কিছু বলা হয় না। ক্লাসে দেরি করে আসলেও তাকে অ্যাটেন্ডেন্স দেন। কিন্তু অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে বলেন, "তোমরা আর বিচারকের মেয়ে সমান কথা নয়।" প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদেরকে টিসি দেওয়ার হুমকি দেন।'

স্কুলের প্রধান শিক্ষিক মোছা. রাবেয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, 'শিক্ষার্থীরা বাড়িয়ে বলছে। ফেসবুক পোস্টে বিচারকের মেয়ে তাদের অপমান করার বিষয়ে তারা আমাকে কিছুই জানায়নি। আর সাংবাদিকদের দেখে মেয়েরা বাড়িয়ে বলছে।'

তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'সব মেয়েই আমার কাছে সমান। স্কুলে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকায় শিক্ষার্থীদের ময়লা তাদের নিজেদেরকেই পরিষ্কার করতে হয়। বিচারকের মেয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু না দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে ঘর ঝাড়ু দিতে বাধ্য করেছে। এতে বিচারকের মেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়েছে।'

পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি এড়িয়ে যান।

পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ রাত ৮টায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, 'একজন অভিভাবক আরেকজন অভিভাবককে মাফ চাওয়াতে পারেন না। আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে এই ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছি। এখানে একটা বাচ্চাকে বা অভিভাবককে যদি কেউ অপমান করে সেটা আমারও অপমান। আমার মেয়েও এই স্কুলে পড়ে। আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের যথাযথ বিচার পাইয়ে দিবো।'

এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি শিক্ষাথীদের জানান।

তিনি আরও বলেন, 'যদি কখনো শিক্ষক কোনো অন্যায় করে তাহলে আমরা তার বিচার করবো। দরকার হলে মোবাইল কোর্টের মধ্যে সে শিক্ষককে শাস্তির আওয়াতায় আনা হবে। তোমরা রাইট পজিশনেই আছো। বিচারক যে আচরণ করেছেন সেটার বিচার করবেন জেলা জজ। সেটা তিনি আমাকে বলেছেন। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় জেনে গেছে। সেই বিচারকের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা জজ আমাকে জানিয়েছেন।'

এ বিষয়ে জানতে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu says Israel close to meeting its goals in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

17h ago