পণ্যমূল্য কারসাজি বন্ধে ৩ আইন, নেই প্রয়োগ

খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) এই আইনগুলো কার্যকর করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।
স্টার ফাইল ছবি

পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধে বাংলাদেশে অন্তত ৩টি আইন এবং সরকারি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব আইনের শিথিল প্রয়োগ ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে পণ্যের দাম নিয়ে নিয়মিতই কারসাজি চলছে বলে মনে করছেন পণ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত মুনাফা করে আসছেন। রমজান ও ঈদের আগে এবং পণ্য সরবরাহে যেকোনো সমস্যার অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এবং কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ তৈরি করা হয়েছে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে এবং এ সংক্রান্ত অপরাধীদের শাস্তি দিতে।

খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) এই আইনগুলো কার্যকর করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, 'এটা একটা ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো। বিভিন্ন উৎসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেলে অভিযান চালানো হয়। এতে সাময়িক স্বস্তি আসে, কিন্তু সমস্যা রয়ে যায়।'

প্রায় ২ বছর ধরে বাজারের উচ্চমূল্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। গত বছরের আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশে পৌঁছানোর পর গত ৬ মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির পর উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই সময়ের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে।

আইনের শিথিল প্রয়োগ

কৃষি বিপণন আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, কৃষিজাত পণ্য, কৃষি উপকরণ ও প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জনের অপরাধে একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হবে।

কৃষিপণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, ওজনে প্রতারণা করা, দৃশ্যমান স্থানে পাইকারি ও খুচরা মূল্য প্রদর্শন না করা এবং সংকটকালীন সময়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মজুদ থেকে পণ্য সরবরাহ না করাও আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসব অপরাধের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন বিভিন্ন শাস্তির বিধান করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় মজুদদারির জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, 'আমাদের দেশে অনেক আইন আছে, কিন্তু সমস্যা বাস্তবায়নে।'

তিনটি সরকারি সংস্থার মধ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য কৃষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।

গত বছর এই অধিদপ্তর অংশীদারদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য লাভের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো দৃশ্যমান মনিটরিং হয়নি।

মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, 'একটি পণ্যের প্রকৃত মূল্য বের করা এবং উৎপাদক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য অস্থায়ী মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব। এই ধরনের মূল্য নির্ধারণ এবং সেগুলো প্রকাশ করা হলে তা ভোক্তাদের সচেতন করে তোলে। সেটা করা গেলে দামের সঠিক পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, এর জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই প্রাধান্য পায়।

একটি একক সংস্থাকে বাজার পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন জানান, তার মন্ত্রণালয় প্রধানত চাল ও গমের দাম দেখে, কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিপণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর নজর রাখে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি তদারকি করে এবং এই ৩ সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নেই বলে দাবি করেন তিনি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওমর মো. ইমরুল মহসিন জানান, কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী তার অধিদপ্তর মূল্য কারসাজিকারীদের শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার অভাবে তারা আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন না।

তিনি বলেন, 'আমরা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়েছিলাম, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। অভিযান পরিচালনা করতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয় আমাদের।'

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, 'বিক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে অধিদপ্তর অভিযান চালায়।'

অভিযানের পরও মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, 'ভোক্তাদের ভোগান্তি কমাতে ৩টি সংস্থা থাকলেও তারা ব্যর্থ।'

তিনি ভোক্তাদের কল্যাণের জন্য একটি ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ দেন।

Comments

The Daily Star  | English
digital security act

Press freedom index: Bangladesh falls 2 spots, only Afghanistan worse in South Asia

The country was ranked 165th among 180 nations, placing it only above Afghanistan among South Asian countries

41m ago