ভারত থেকে ‘বাংলাদেশি পণ্য’ আমদানি করল এলিট পেইন্ট

এলিট পেইন্ট

ভারত থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও 'বাংলাদেশি পণ্য' (প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ) লিখা প্রায় সাড়ে ৩ টন সাইনবোর্ড প্রিন্টার্স আমদানি করেছে এলিট প্রিন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। আইন লঙ্ঘন করে আমদানি করায় তাদের এই চালানটি আটকে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা।

কাস্টমস আইন-১৯৬৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য বা বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ নেই। এই আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী তা আমদানি নিষিদ্ধ এবং ধারা ১৫৬ এর (১)(৯) অনুযায়ী এসব পণ্য বাজেয়াপ্ত হওয়ার পাশাপাশি আমদানিকারক বা জড়িত ব্যক্তিকে পণ্যের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান আছে।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, ভোক্তা অধিকার বিবেচনায় প্রস্তুতপণ্যের গায়ে অবশ্যই প্রস্তুতকৃত দেশের নাম থাকতে হয়। ঘোষণাপত্রেও 'কান্ট্রি অব অরিজিন' হিসেবে সে দেশের নাম উল্লেখ করতে হয়।

কিন্তু এলিট প্রিন্ট এ চালানের সব দলিলপত্রে 'কান্ট্রি অব অরিজিন' ভারত উল্লেখ করলেও পণ্যের গায়ে 'প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ' লেখা আছে। তারা নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো ও মোড়ক ব্যবহার করে প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক কনটেইনার ভর্তি রং এমনভাবে আমদানি করেছে, যা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করা সম্ভব।

প্রতিটি ১ কেজি ওজনের প্লাস্টিকের কনটেইনারে আমদানি হওয়া এসব পণ্যের গায়ে বাংলায় ও ইংরেজিতে তা ব্যবহারের নির্দেশিকাও দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে আছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ।

আমদানির নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মার্চ ভারতের সৌজন্য কালার প্রাইভেট লিমিটেড থেকে বিভিন্ন কালারের ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সাইনবোর্ড প্রিন্টার্সের একটি চালান আমদানি করে এলিট প্রিন্ট। প্রস্তুতপণ্য হওয়ায় পণ্যের গায়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম থাকার কথা থাকলেও প্রতিটি পণ্যের গায়ে বাংলায় ও ইংরেজিতে এলিট প্রিন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের নাম আছে।

পণ্যের মোড়কে 'প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ' ও রেজিস্টার্ড অফিস হিসেবে উল্লেখ রয়েছে—'৯২, বায়জিদ বোস্তামি রোড, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা, চট্টগ্রাম'।

চালানটি খালাসের দায়িত্বে রয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলিট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, এলিট পেইন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা কোনো প্রস্তুতপণ্য আমদানি করতে পারবে না। যদি তা করে, তাহলে তা বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং তারা আমদানি ও দেশে পণ্য বিক্রিতে কোনো ধরনের শিল্প-সুবিধা পাবে না।

যদিও তারা আমদানি নথিতে কাস্টমস প্রসিডিউর কোড ৪০০০ এবং ভি-১১ ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ তারা শিল্প সুবিধার পাশাপাশি আগাম কর মওকুফ চায়।

কাস্টমস আইন লঙ্ঘন করায় এসব পণ্য কোনোভাবেই আমদানি বা খালাসের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চালানটির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া ও আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।'

এ বিষয়ে এলিট প্রিন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।'

'আমদানির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা ভালো বলতে পারবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জেনে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বিষয়টি জানানো হবে,' যোগ করেন তিনি।

পরবর্তীতে কোম্পানির বোর্ড সেক্রেটারি ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, 'রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি মুদ্রণে ভুল করেছে এবং পরে তারা আমাদের সংশোধনী চিঠি দিয়েছে। আমরা পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমসের কাছে এ চিঠি জমা দেবো।'

কীভাবে পণ্যের গায়ে এলিট পেইন্টের নাম ও কারখানার ঠিকানা এলো এবং ভারত থেকে আনা ক্যানগুলোর ডিজাইন এলিট পেইন্টের মতোই হলো, তা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

Comments

The Daily Star  | English
agriculture allocation in Bangladesh budget 2025-26

Agri budget not enough to ensure food security: experts

The government has proposed a 3.55 percent rise in the budget allocation for agriculture, food, livestock and fisheries in the next fiscal year, setting aside Tk 39,620 crore..But agro-economists say the increase is far from sufficient to ensure the country’s long-term food security..<p

39m ago