‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে চাকরি হারাতে পারেন ৩০ কোটি মানুষ’

‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে চাকরি হারাতে পারেন ৩০ কোটি মানুষ’
রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরি প্রতিস্থাপন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। অর্থাৎ, এসব জায়গায় মানুষের কাজ করবে এআই। 

প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ৪ ভাগের একভাগ শ্রম বিষয়ক চাকরি চলে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে। তবে নতুন এই প্রযুক্তির ফলে নতুন চাকরি ও উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।

গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে জেনারেটিভ এআইকে 'উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি কিংবা গুগলের তৈরি বার্ড জেনারেটিভ এআইয়ের কিছু উদাহরণ।

কাজ হারানোর আশঙ্কা

ব্রিটিশ সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সরকার মনে করছে এই প্রযুক্তি অর্থনীতিতে আরও প্রবৃদ্ধি আনবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রযাত্রার কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, সে বিষয়েও জনগনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে ব্রিটিশ সরকার।  

ব্রিটিশ প্রযুক্তি মন্ত্রী মিশেল ডনেলান দ্য সানকে বলেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাতে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার বদলে আমাদের কাজকে আরও উন্নত করার জন্য সহায়ক হয়, আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।'

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোন কোন খাতের চাকরিতে বেশি প্রভাব রাখবে, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কাজের ৪৬ শতাংশ এবং আইন পেশার ৪৪ শতাংশ কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় পরিণত করা যাবে। তবে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মাত্র যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা যাবে।

এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অনেক শিল্পীরাও এআইয়ের কাছে নিজেদের কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।

বেতন কমবে

অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের ফিউচার অব ওয়ার্ক বিভাগের পরিচালক কার্ল বেনেডিক্ট ফ্রে বলেন, 'আমি শুধু একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে, জেনারেটিভ এআই কত সংখ্যক চাকরিকে প্রতিস্থাপিত করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।'

'যেমন ধরুন, সাধারণ লেখার দক্ষতাসম্পন্ন মানুষরাও এখন চ্যাটজিপিটির সাহায্যে প্রবন্ধ ও আর্টিকেল লিখতে পারছে। সাংবাদিকেরা আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন, ফলে তাদের বেতন কমবে, যদি না তেমন কাজের উল্লেখযোগ্য চাহিদা সৃষ্টি না হয়।'

তিনি বলেন, 'জিপিএস এর কথাই ধরুন। যারা লন্ডনের রাস্তাঘাট খুব ভালো চিনতো, জিপিএস আসার ফলে তাদের গুরুত্ব কমে গেছে। ফলে তাদের বেতনও অনেক কমেছে। আগামী কয়েক বছরে জেনারেটিভ এআইও  সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে এমন প্রভাব রাখবে।'

কমবে চাকরির সংখ্যাও

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৬০ শতাংশ মানুষ এমন পেশায় নিয়োজত আছেন, ১৯৪০ সালে যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু অন্যান্য গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮০ এর দশক থেকে প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার কারণে যত চাকরি গেছে, সেই পরিমাণ নতুন চাকরি তৈরি হয়নি।

যদি  জেনারেটিভ এআইয়ের অগ্রযাত্রা তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির মতো হয়, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে এটি চাকরির সংখ্যা কমাবে।

ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রেজ্যুলেশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী টরস্টেন বেল মনে করেন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এখনো খুবই অনিশ্চিত।

তিনি বলেন, 'আমরা এখনো জানি না এই প্রযুক্তি কীভাবে বিকশিত হবে এবং কোম্পানিগুলো কীভাবে এটিকে তাদের কাজে লাগাবেন। তার মানে এটা না যে এই প্রযুক্তি আমাদের কাজে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে আমাদের জীবন-মান উন্নয়ন করা যায়, সেবার মূল্য কমানো যায় সেটিকে লক্ষ্য দিতে হবে। একইসঙ্গে অন্য দেশ ও কোম্পানি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে গেলে বাকিদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে।'

 

সূত্র: বিবিসি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

IMF to continue talks with Bangladesh for near-term agreement

The global lender said such an agreement would pave the way for completing the combined third and fourth reviews

2h ago