জুলাই-মার্চে এডিপি বাস্তবায়ন ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩ এর প্রথম ৯ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বাস্তবায়নের হার দেখা গেছে। মার্চ পর্যন্ত মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ৯ মাসে এডিপির বাজেট থেকে ৯৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৯৩৪ কোটি।
চলতি অর্থবছরে এডিপির সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এডিপির ৪৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছিল সরকার।
চলতি অর্থবছরের উল্লেখিত সময়সীমার মাঝে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এডিপির সরকারি অংশের ৫৬ হাজার ১৫১ কোটি টাকা ব্যয় করতে সক্ষম হয়, যা এর আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে সাবধানী হয়। যার ফলে সার্বিকভাবে সরকারি তহবিলের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে।
গত ৩ বছর ধরে সরকার স্বল্প অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছে যাতে অধিক উৎপাদনশীল খাতের জন্য তহবিল মুক্ত রাখা যায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাস্তবায়নের গতি কমে যাওয়ার সঙ্গে সরকারের আর্থিক সমস্যার যোগসূত্র রয়েছে।
তিনি জানান, ৯ মাস পার হয়ে গেলেও, এখনও সরকার চাইলে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বিতরণ করে গড় হারে পৌঁছাতে পারবে।
সরকার সাধারণত প্রতি বছর মোট এডিপি বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করে।
এ বছর সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন ৮০ শতাংশে উন্নীত করা নির্ভর করবে সরকারের তহবিল বিতরণ সক্ষমতার ওপর।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বাকি ৩ মাস সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ বছর রাজস্ব আদায় খুব বেশি বাড়বে না।
ফলস্বরূপ, সরকারকে হয় ঋণ নিতে হবে বা সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে হবে।
'কিন্তু বৈদেশিক সাহায্য সমর্থিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার ওপর আরও জোর দেওয়া উচিত ছিল', যোগ করেন মনসুর।
করোনাভাইরাস মহামারির পর ৯ মাসে বৈদেশিক ঋণ থেকে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে বরাদ্দের ৫২ শতাংশে পৌঁছায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, অর্থাৎ মহামারির আঘাত হানার আগে, এটি ছিল ৫৭ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ কমে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি হয়েছে, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে ৫ হাজার ২৫১ কোটি ছিল।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় সংকোচনের কোনো নির্দেশনা না থাকলেও এ খাতে উন্নয়ন ব্যয় সবচেয়ে কম।
এই ৯ মাসে, এডিপি বরাদ্দ পাওয়ার নিরিখে শীর্ষ ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে আছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টি তাদের মোট বরাদ্দের মাত্র ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে, যার মূল্যমান ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের খরচ পরিস্থিতিও করুণ।
বাজেট খরচের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে সেতু বিভাগ। মোট বরাদ্দের ৬৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ ব্যয় করেছে সংস্থাটি।
তালিকার পরের স্থানে আছে যথাক্রমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ (৫৬ দশমিক ২৭ শতাংশ) এবং বিদ্যুৎ বিভাগ (৫৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ)।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments