বাসে ভাড়া বেশি তাই দলবেঁধে ট্রাকে ঈদযাত্রা

ট্রাকগুলোতে পণ্য নেই, তাতে চেপে বসেছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

রাত ১০টা বেজে ৪০ মিনিট। নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রান্তিক সার্ভিস স্টেশন তেলের পাম্পে সারিবদ্ধ ৪টি পণ্যবাহী ট্রাক দেখা যায়। ট্রাকগুলোতে পণ্য নেই, তাতে চেপে বসেছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা।

ঈদ উপলক্ষে বাস ভাড়া বেশি। তাই কম ভাড়ায়, দ্রুত সময়ে বাড়ি পৌঁছাতে এ বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন।

যাত্রী ও ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চারটি ট্রাকেরই শেষ গন্তব্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা। যাত্রীরাও সবাই আশেপাশের গ্রামের। তাদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ শহরে দিনমজুরি কিংবা কোনো পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

ময়মনসিংহের দাপুনিয়ার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম। ৮ বছর ধরে নাপায়ণগঞ্জ শহরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকেন নগরীর দেওভোগ মাদরাসা এলাকায়। ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন তিনি। বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাক।

নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রান্তিক সার্ভিস স্টেশনে ট্রাকে তোলা হচ্ছে ঈদযাত্রীদের। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

হাফিজুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাসে খোঁজ নিছিলাম, ৮০০ টাকা করে ভাড়া। এইটা আমার ভাইয়ের ট্রাক, সে কইলো, উঠে পড়লাম। সোমবার আবার ফিরে আসব।'

ট্রাকের চালক আপন ভাই হওয়াতে ভাড়া পরিশোধ করা লাগবে না হাফিজুলের। তবে অন্য যাত্রীদের ৫০০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানান। ট্রাকটি অন্তত ৪০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা হবে।

মুক্তাগাছা উপজেলায় বাড়ি পোশাক কর্মী সাদিকুল ইসলামের। মা এবং ভাগ্নিকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'গত ২ বছর গ্রামে যাইতে পারি নাই। দুই বছর যাইতেছি। এর আগেও এমনে ট্রাকে গেছি। সমস্যা হয় না। বৃষ্টি নামলে ত্রিপল লাগিয়ে দেয়। একটু সমস্যা তো হয়ই। আসলে ঈদে আনন্দটা বড়, ভোগান্তি কিছু না। বাড়ি যাবার আনন্দই অন্য রকম। তার ওপর ভাড়া কম, কোথাও থামাথামি নাই, দ্রুত যাব।'

কাঙ্ক্ষিত বাস দাঁড়িয়ে ছিল, তবে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে দেরি করেছেন তাওহীদ ইসলাম। বাস মিস করায় তার এক আত্মীয় চাষাঢ়ায় এই ট্রাকে তুলে দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের বিসিকে একটি পোশাক কারখানায় ২ মাস আগে চাকরি নিয়েছেন তাওহীদ। ট্রাকের লম্বা পথের যাত্রা জন্য এবারই প্রথম। তাকে ট্রাকে তুলে দেওয়ার পর ভয় কাটাতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছিলেন চাচা রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'পঞ্চবটি থেকে রিজার্ভ করা বাস ছিল। যাইতে দেরি হওয়ায় বাস মিস করছি। ট্রাকে সমস্যা হইবো না। একটানে নিয়া যাইবো। কিন্তু প্রথমবার তো একটু ভয় পাইতেছে।'

অন্য সময় পণ্য বহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ট্রাকচালক ইমরান হোসেন। ঈদের আগে দু'দিন পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের উপায় হিসেবে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত তার। ইমরানের নিজের বাড়িও ময়মনসিংহ।

ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারই প্রথমবার। ২৫ জন যাত্রী উঠছে। আর চার-পাঁচজন আসবে, তাগোরে নিয়া যামু। ৫০০ টাকা কইরা নিতেছি। আসা-যাওয়ার তেল খরচ আর মালিকের টাকা কাইটা রাইখা ৪-৫ হাজার টাকা থাকব। আবার রাস্তায়-রাস্তায়ও তো টাকা দিতে হয়।'

যাত্রীবহনে নতুন নন আরেক ট্রাকের চালক খলিলুর রহমান। সুযোগ থাকলেই ঈদে যাত্রী পরিবহন করেন তিনি।

খলিলুর বলেন, 'আমাগো লগে লোকজন যোগাযোগ করে। পরে সুযোগ থাকলে আমরা যাত্রী টানি। ঈদের সময় তো বাসের ভাড়া অনেক বাইড়া যায়। এই কারণে ট্রাকে অনেকেই কম ভাড়ায় যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

BB to adopt more flexible exchange rate to meet IMF conditions

After a months-long stalemate, the Bangladesh Bank (BB) is finally set to adopt a more flexible exchange rate regime to fulfil conditions tied to a $4.7 billion International Monetary Fund (IMF) loan programme, which will likely enable Bangladesh to receive $1.3 billion in the fourth and fifth tranches.

8h ago