লেগুনার পাদানিতে ঝুলন্ত শৈশব

লেগুনার যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছে কিশোর হেলপার। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা। নগরের ব্যস্ততা এরমধ্যেই জেঁকে বসেছে। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে এসে দাঁড়াতেই হঠাৎ একেবারে সামনে এসে থামে একটি লেগুনা। লেগুনার পাদানি থেকে নেমেই 'মোহাম্মদপুর নামেন, নামেন' বলেই হাক শোনা যায়, পরক্ষণেই 'ওই গাবতলী, গাবতলী' কণ্ঠ ভেসে আসে। জীবনের রুঢ় বাস্তবতায় পোশাকে মলিনতা গ্রাস করলেও, মুখ জুড়ে থাকা কোমলতা জানান দেয় শৈশব পেরোয়নি তার।

নাম জানতে চাইলে মৃদু হেসে জানায় 'আব্বাস'। 'কখন থেকে কাজ শুরু করেছ? জানতে চাইলে ১২ বছর বয়সী আব্বাস জানায় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়েছে কাজ, চলবে রাত ১০টা অব্দি। মাঝে সকাল, দুপুর আর রাতের খাবারের জন্য পাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বিরতি। খাওয়ার খরচাটা অবশ্য দেবে লেগুনার চালক।

'দিনশেষে জমা কত থাকে?' জিজ্ঞেস করতেই আব্বাস জানায় 'কহনো তিনশো কহনো সাড়ে তিনশো, দিন ভালা হইলে চাশশো। বাকিসব ডেরাইবারের। এক হাজার কইরা ডেরাইবার জমা দিয়া গাড়ি লয় মহাজনের থেইকা।' বেশ চটপটিয়েই উত্তর দেয়।

'পড়াশোনা করেছ?' জিজ্ঞেস করতেই আব্বাসের মুখে মলিনভাব প্রকট হয়। তার ভাষায় 'কেলাস থিরি' পর্যন্ত পড়েছে সে, তিন বছর ধরেই লেগুনার পাদানিতে ঝুলছে পা।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবাকে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাও থমকে গিয়েছিল আব্বাসের। একটি গার্মেন্টসে কাজ করা পোশাক শ্রমিক মাকে নিয়ে সে থাকে রায়েরবাজারের ছাবেদ আলী বস্তিতে।

আব্বাসের মতো আরেক লেগুনা রুটে হেলপার হিসেবে কাজ করে ১০ বছর বয়সী সবুজ। সবুজের দেখা পাওয়া যায় মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ মোড়ে। লেগুনার হেলপার হিসেবে সে কাজ করে শ্যামলী মোহাম্মদপুর রুটে। জানায় রোগে শয্যাশায়ী বাবার কাজ করার সামর্থ্য নেই। ফলে বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা মায়ের সামান্য আয়ে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারাও ছিল রীতিমতো দুঃসাধ্য। বছর দুয়েক আগে তাই লেগুনার হ্যান্ডেল ধরতে বাধ্য হয়েছিল সবুজ। টালমাটাল পরিবারটিতে সবুজের দৈনিক উপার্জিত ৩০০ টাকাই এখন সবচেয়ে বড় সম্বল।

ঢাকার বেশিরভাগ লেগুনা রুটেই আব্বাস কিংবা সবুজের মতো লেগুনা হেল্পারের দেখা মেলে। কেবল আব্বাসের গাবতলী-সেকশন রুটের কথাই ধরা যাক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই রুটের একজন লাইনম্যান বলেন, এই রুটটিতে আব্বাসের মতো লেগুনা চালকের সহযোগী হিসেবে বা হেলপার হিসেবে কাজ করছে ২০-২৫ জন শিশু।

লেগুনায় হেলপার হিসেবে কাজ করতে করতেই চালক হিসেবে কাজ শুরু করে অনেকে।

যদিও শিশুশ্রম আইন ২০১৩-তে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য গাড়ি চালকের সহকারীর কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চাইল্ড লেবার ইউনিট থেকে প্রকাশিত শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকাতে রয়েছে চালকের সহযোগী হিসেবে শিশুদের ব্যবহার।

তবে কীভাবে চলছে লেগুনায় শিশুশ্রম—ট্রাফিক পুলিশেরা বলছেন মানবতার খাতিরে ছাড় দিচ্ছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আমরা দেখেও দেখে যাই। চাইলে বাধা দিতে পারি কিন্তু মানবিকতার খাতিরেই বাধা দিই না। কারণ আমরা যদি বাধা দিই তাহলে ওদের পরিবার না খেয়ে থাকবে। কারণ তাদের উপার্জনেই তাদের পরিবার চলছে।'

করোনাকাল ছিল বড় বিপর্যয়

সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকার লেগুনার রুট ঘুরে লেগুনায় কাজ করা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শিশু শ্রমিকদের অধিকাংশই করোনায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশু। একদিকে আর্থিক অনটন ও অন্যদিকে করোনার ধকল সবকিছু মিলিয়ে এই শিশুদের পরিবারগুলোর অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনায় ঝরে পড়া তেমনই এক শিশু ১৬ বছর বয়সী সিয়াম। করোনার আগে একটি মাদ্রাসার হেফজখানায় পড়লেও বর্তমানে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করে যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা লেগুনা রুটে। সিয়াম জানায়, ভোর ৫টায় শুরু হয় কাজ, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। সিয়ামের মতো এমন অন্তত ৪০ জন শিশু যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি রুটে কাজ করে। যার মধ্যে বেশিরভাগ শিশুই করোনাকালে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে।

ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত 'এশিয়ায় শিক্ষাখাতের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবিলা কার্যক্রম' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, '২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।'

অন্যদিকে ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সাড়ে ১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কমেছে। করোনার আগে ২০২০ সালে যেখানে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার, সেখানে ২০২১ সালে শিক্ষার্থীর সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২ কোটি ৯০ হাজারে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সব শিশু ঝরে পড়া শিশু নয়। কেউ ঝরে পড়েছে, বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। ঠিক কত সংখ্যক শিশু করোনায় স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে তার পরিপূর্ণ পরিসংখ্যান নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনাকালে ঠিক কত সংখ্যক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে সে পরিসংখ্যান আমাদের হাতে এই মুহূর্তে নেই। এপিএসসির প্রতিবেদনে যে সংখ্যাটি আছে তা সামগ্রিক। এর মধ্যে অনেক শিশু কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়েছে, কেউ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। অনেক শিশু ঝরে পড়েছে।'

ঝরে পড়া এই শিশুদের স্কুলে ফেরাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, 'যারা ঝরে পড়েছে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উপবৃত্তির সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করছি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা যেন পুরোপুরি সর্বত্র চালু হয় আমরা সে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী অক্টোবর নাগাদ প্রাথমিকে আমরা পুরোপুরিভাবে হাফ ডে মিল চালু করতে পারব বলে আশা করছি। যা ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি স্কুল মিল্ক কর্মসূচির আওতায় টিফিনের সময় শিশুদের দুধ পান করানো শুরু হয়েছে। আশা করছি ঝরে পড়া শিশুরা এবং বিভিন্ন শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুরা আবার শিগগির স্কুলমুখী হবে।'

লেগুনায় শিশু শ্রমের বাস্তব অবস্থা দেখতে এই প্রতিবেদক ঢাকার বেশ কয়েকটি লেগুনার রুট সরজমিনে ঘুরে দেখেন। দেখা যায় হেলপার হিসেবে কাজ করা অনেক শিশু লেগুনার চালকও বনে যাচ্ছে।

জাতীয় পরিবহন আইনে পেশাদার চালকদের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে বলে নির্দিষ্ট করা হলেও বাস্তবে তার তেমন প্রয়োগ নেই।

জানা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক লেগুনা চালক এবং সহযোগীভেদে যেখানে দৈনিক ৭০০ ও ১২০০ টাকা দিতে হয়, সেখানে শিশুরা মজুরি পায় ৩০০ টাকা ও ৮০০ টাকা। লেগুনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, দৈনিক গড়ে ১৫ ঘণ্টা লেগুনাতে শ্রম দেয়ার বিনিময়ে শিশু শ্রমিকরা মূল মজুরির বাইরে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের খরচ পেয়ে থাকে।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

লেগুনায় শিশুশ্রমের সঙ্গে সংযুক্ত শিশুদের কীভাবে পুনরায় মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনাকালীন সময়ে শিশুদের একটি বড় অংশই ঝরে পড়েছে এটা সত্য। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেগুনায় শ্রমিক হিসেবেও যুক্ত হয়েছে। করোনার আগে থেকেই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে আউট-অব-স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম রয়েছে। যা করা হয়েছিল ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের কথা মাথায় রেখে। কারণ এই বয়সেই সবচেয়ে বেশি শিশু ঝরে পড়ছে। এই প্রোগ্রামটির মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের অধিকাংশকেই আবার মূল ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। অন্যদিকে তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া, পরিবারকে বোঝানো, শিক্ষা সুরক্ষার জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ পুরো বিষয়টি যতো দ্রুত সম্ভব পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলেই তাদের একটি বৃহৎ অংশই মূলধারার শিক্ষায় ফিরে আসবে।'

লেগুনায় শিশুশ্রম বন্ধে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারে জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লেগুনায় শিশুশ্রম বা সামগ্রিকভাবে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে চালু করতে হবে। করোনাকালীন সময়েও একটি বৃহৎ সংখ্যার শিশু ঝরে পড়েছে। এদিকে দেখা যাচ্ছে তাদের পরিবারও দরিদ্র। তাই সামগ্রিকভাবে শিশুশ্রম নিরোধের ক্ষেত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন জরুরি। এতে করে পরিবারগুলো কিছুটা আর্থিক সহায়তা পাবে। যদি এটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ঝরে পড়া এই শিশুরা শিক্ষার মূল ধারায় আসতে পারবে। ঠিক কত সংখ্যক শিশু এই পেশায় সংযুক্ত রয়েছে তাও কিন্তু আমরা জানি না। প্রধানত তথ্য উপাত্তেরও এখানে ভীষণরকম ঘাটতি রয়েছে। তাই সব মিলিয়েই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে একজন ঝরে পড়া শিশুও যেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে না থাকে।'

ঢাকায় যত রুটের লেগুনায় চলছে শিশু শ্রম

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকাতেই লেগুনার রুট রয়েছে চারটি। ঢাকা মহানগর হিউম্যান হলার মালিক সমিতির দেয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুর-ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর-শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান-শ্যামলী, ও মোহাম্মদপুর- মহাখালী; এই চারটি রুটে চলাচল করছে ১২৫টির মতো লেগুনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেগুনা সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন  এই রুটগুলোর মধ্যেই এক তৃতীয়াংশই শিশু শ্রমিক। যাদের সবাই শিক্ষার আলো থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।

রাজধানীতে লেগুনার সর্ববৃহৎ রুট যাত্রাবাড়ী। যাত্রাবাড়ী থেকে ১০টিরও বেশি রুটে লেগুনা চলাচল করে।

যাত্রীবাড়ীতে লেগুনা স্ট্যান্ড। অনেক শিশুই এখানে হেলপারের কাজ করে।

জানা যায়, যাত্রাবাড়ীতেই সবচেয়ে বেশি শিশু লেগুনাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যাত্রাবাড়ী থেকে চলাচলকারী তেমনই দুটি যাত্রাবাড়ী- জুরাইন, ও যাত্রাবাড়ী-আবদুল্লাহপুর। এই দুটি রুটে ৭০টি লেগুনা দৈনিক ২৩ ঘণ্টাই চলাচল করে।

ঢাকায় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লেগুনাতে ঠিক কত সংখ্যক শিশু কাজ করছে তার পরিপূর্ণ কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ঢাকায় লেগুনা শ্রমিকদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই শিশু। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৬ সালে আমরা পরিসংখ্যান চালিয়ে দেখেছিলাম তখন ঢাকায় ৮৫টি রুটের লেগুনায় ৩৫ শতাংশই শিশু ছিল। এখন সংখ্যাটি নিশ্চয়ই আরও বেড়েছে।'

লেগুনায় শিশুশ্রম কেন চলছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সদস্য দেলোয়ার হোসেন চুন্নু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা লেগুনায় শিশু শ্রম বন্ধ করতে চাইলেও শিশুরা নিজেরাই কিছুদিন পরে চলে আসছে। কারণ শিশুরা দেখছে তাদের খাওয়া পরার সংস্থান হচ্ছে না। উল্টো তাদের পরিবারই তাদের উপর নির্ভরশীল। সরকার যদি তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে তাহলেই শিশুরা আর লেগুনায় আসবে না।'

আছে আশাব্যাঞ্জক চিত্রও

রাজধানীর বিভিন্ন লেগুনা রুট ঘুরে পাওয়া গেছে কিছু আশাব্যাঞ্জক চিত্রও। রাজধানীর বেশ কয়েকটি লেগুনার রুটে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে নীলক্ষেত থেকে চকবাজার, নীলক্ষেত- গুলিস্তান, নীলক্ষেত- সেকশন এবং নীলক্ষেত ফার্মগেট রুটের লেগুনায় বর্তমানে কোনো শিশু কাজ করছে না। এই রুটের লেগুনা চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আগে আমরা হেলপার হিসেবে বাচ্চাদের রাখতাম, এখন আর রাখি না। প্রশাসনের বাধার কারণে বাদ দিয়া দিছি। নতুন করে হেলপারও রাখি না। জ্যামে বা সিগন্যালে পড়লে নিজে লেগুনার থেকে নাইমাই ভাড়া তুলি।'

লেগুনার অন্যতম বৃহৎ রুট গুলিস্তানেও দেখা গেছে একই চিত্র। গুলিস্তান থেকে ছেড়ে যাওয়া চারটি রুটে কোনো শিশু বর্তমানে কাজ করছে না। যদিও এসব রুটে প্রশাসনের চাপের চেয়ে খরচ বাঁচানোই প্রধান উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্টদের। মূলত খরচ বাঁচাতেই এসব রুটের লেগুনাতে কোনো হেলপার রাখা হয় না।

ঢাকায় লেগুনায় শিশুশ্রম বন্ধে পুলিশ কতখানি তৎপর জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মুনিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকায় এত বেশি রুটে লেগুনা চলাচল করে যে, চাইলেও আমরা সব রুটের লেগুনায় শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারছি না। এরইমধ্যে কিছু রুটে আমরা পুরোপুরিভাবে শিশুশ্রম বন্ধ করতে পেরেছি। যেসব লেগুনায় শিশুরা চালক কিংবা হেলপার হিসেবে কাজ করছে সেসব লেগুনার মালিক এবং চালকদের বিরুদ্ধেও প্রতিনিয়তই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি সংগঠনের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রমও চালাচ্ছি।'

(প্রতিবেদনে শিশুদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং তাদের গোপনীয়তা রক্ষায় ছবিতে তাদের মুখ ঝাপসা করা হয়েছে।)

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago