‘সেন্টমার্টিন রক্ষা করতে জমি বেচাকেনায় কঠিন শর্ত আরোপ করতে হবে’

কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত 'বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বর্তমান বিপন্ন অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হলে সময়োপযোগী পরিবেশবান্ধব মহাপরিকল্পনা নেওয়া জরুরি এবং কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিবেশবিদ ও অধিকারকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারে একটি সেমিনারে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা এ কথা বলেন। 

তারা বলেন, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য আধার কক্সবাজারের প্রাণবৈচিত্র্য, খাল, নদী, পাহাড়, বনসম্পদ সবকিছু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার আজ তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও চরিত্র হারাচ্ছে। 

'বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ' শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), পরিবেশ অধিদপ্তর, দৈনিক সমকাল, নিজেরা করি, এএলআরডি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ও ইয়েস। 

এতে অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, 'কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ৬০ দশকে কক্সবাজারকে যেভাবে দেখেছি, এখন সে ছবি দেখি না। এখানে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে, পাহাড় কেটে শেষ করা হচ্ছে, প্যারাবন কেটে সাফ করে ফেলা হচ্ছে। যারা ক্ষমতাধর তারাই এসব দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে জড়িত। এসব দুর্বৃত্তদের খুঁটির জোর কোথায় তা চিহ্নিত করতে হবে স্থানীয় নাগরিক সমাজকে। কক্সবাজারকে বাঁচাতে হলে আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি বদলাতে হবে।' 

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'কক্সবাজার একটি পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা। তাই এখানে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে অতি সতর্কতার সঙ্গে। বর্তমানে যে সব উন্নয়ন পরিকল্পনা হচ্ছে তাতে মারাত্মক গলদ রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রক্ষা করতে হলে সেখানকার জমি বেচাকেনায় কঠিন শর্ত আরোপ করতে হবে। পর্যটকদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পাহাড়কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন একটি হটলাইন চালু করতে পারে।'

কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে নিজেরা করি'র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, 'কক্সবাজার একটি অপরিকল্পিত শহর। কক্সবাজারকে রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে, চিন্তা করতে হবে। এখানে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যারা পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।' 

এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, 'কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ আজ বিপর্যস্ত এতে কারও দ্বিমত নেই। কক্সবাজারের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। যারা এখানকার জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে নির্মোহভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিতভাবে অবস্থান নিতে হবে।'

আলোচনায় আরও অংশ নেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমদ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম ও আনোয়ার হোসেন সরকার প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

3h ago