গাইবান্ধার সেই স্কুলমাঠে আবারো মাসব্যাপী ফার্নিচার মেলা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিরাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিরাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আবারো মাসব্যাপী ফার্নিচার মেলা আয়োজনের জন্য মাঠ ভাড়া দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত বছরও এই স্কুলমাঠে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে সেই সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা শিক্ষা অফিস স্কুল মাঠ থেকে মেলা তুলে দেয়।

২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (শাখা-১০) তৎকালীন উপসচিব মো. সামছুল আলম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে বা প্রাঙ্গণে মেলা, যাত্রা বা সার্কাসের মতো বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়।

ওই পরিপত্রে বলা হয়, 'লক্ষ করা যাচ্ছে দেশের কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে বা মাঠে বিভিন্ন প্রদর্শনীর নামে মেলা, যাত্রা ও সার্কাস ইত্যাদি বাণিজ্যিক-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যথাযথ পাঠদান এবং শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।'

ছবি: সংগৃহীত

'এই অবস্থায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছে যে, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে বা মাঠে প্রদর্শনীর নামে মেলা, যাত্রা, সার্কাস ইদ্যাদি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না,' বলা হয় পরিপত্রে।

বিরাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আবারো মাসব্যাপী বাণিজ্যিক মেলার আয়োজন করার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা বসানো বৈধ নয়। আমরা বিরাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে কেন মেলা বসানো হয়েছে সেই বিষয়ে ৭ দিনের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়ে প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়েছি।'

ছবি: সংগৃহীত

গত ২৮ মে চিঠি ইস্যু করা হলেও প্রধান শিক্ষক আজ পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয়টি সাবেক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্কুলের মাঠে মেলা বসানোর জন্য শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাসব্যাপী শিক্ষার্থীরা মাঠে নামতে পারে না, কোনো খেলাধুলাও হয় না।

এলাকাবাসী বলছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রোকনুজ্জামান সরকার ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে জড়িত বলে তিনি কোনো নির্দেশনা মানেন না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা নিষিদ্ধ জানার পরেও এই আয়োজন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রোকনুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেলা বসানোর জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এপির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি।'

উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য লিখিত অনুমতি দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান দিয়েছেন। অনুমতি পত্রের অনুলিপি চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক সদুত্তর দিতে পারেননি।'

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার আর এমপি সাহেবের কাছে এসেছিলেন মেলার অনুমতি নিতে। আমরা বলেছি, শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়; সে জন্য স্কুলের মাঠের এক প্রান্তে মেলা বসাতে বলা হয়েছে।'

কোনো লিখিত অনুমতিপত্র দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা তো এ বিষয়ে অনুমতি দিতে পারি না। আমি কোনো লিখিত অনুমতি দেইনি।'

অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা-৪ আসনের (গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী মোবাইল ফোনে বলেন, 'আমি বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে আছি। কিছুক্ষণ পরে করতোয়া নদীর উপরে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজের উদ্বোধন করা হবে।'

মেলার অনুমতির বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও প্রতিবারই এড়িয়ে যান এই সংসদ সদস্য।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus speech at Earthna Summit 2025 in Doha

No one too poor to dream, no dream too big to achieve: Yunus

He says in his keynote speech at Earthna Summit 2025 in Doha

1h ago