জাবি

অছাত্রদের বের না করা পর্যন্ত চিকিৎসায় অস্বীকৃতি অনশনরত প্রত্যয়ের

গতরাতে হামলার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবস্থান করছেন অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রাতে হামলার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবস্থান করছেন অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। 

চিকিৎসক জানান, প্রত্যয়কে তাৎক্ষণিকভাবে স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে তার বমি ও খিঁচুনি হতে পারে। 

তবে প্রত্যয় জানিয়েছেন, মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে অছাত্রদের বের না করা পর্যন্ত তিনি স্যালাইন নেবেন না।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, 'আজ বুধবার সকালে ওই শিক্ষার্থীকে ২ বার পর্যবেক্ষণ করেছি। তার রক্তচাপ ৯০/৭৫ পর্যায়ে আছে। তিনি ডিহাইড্রেশনে (পানিশূন্যতা) ভুগছেন। এখন তাকে স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। স্যালাইন দেওয়া না হলে তার খিঁচুনি, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।'

সামিউল ইসলাম প্রত্যয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রাতে আমার ওপর হামলা হয়। আমার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও ওপরও হামলা হয়। তারপর থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রে আছি। আমাকে ডাক্তার পরীক্ষা করে স্যালাইন নিতে বলেছেন। তবে আমি অছাত্রদের বের না করা পর্যন্ত স্যালাইন নেব না। আমি এখন চিকিৎসা কেন্দ্রে আছি। যারা আমার সঙ্গে থেকে মার খেয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আমরা আবারো অবস্থান নেব।'

এদিকে গতকাল হামলার পর আগের ৩ দফা দাবির সঙ্গে আরও ২টি দাবি জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থী সামিউল ও হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা। 

নতুন দাবি ২টি হলো মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলম এবং প্রক্টর আ. স. ম ফিরোজ-উল-হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া এবং যারা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে বহিষ্কার করে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।

সামিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৯ ব্যাচ এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত বুধবার রাত থেকে তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের খেলার মাঠে অবস্থান নেন।

তবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি হলের অফিস কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। 

তার অন্য দাবি ৩টি হলো, অছাত্রদের হল থেকে বের করা, গণরুম বিলুপ্ত করা এবং মিনি গণরুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য আসন নিশ্চিত করা। 

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় মীর মশাররফ হোসেন হল শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অনশনরত শিক্ষার্থীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে তার বিছানা-বালিশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অনশনরত সামিউলকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 
বাধা দিতে গেলে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকেও মারধর করা হয়। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়। 

পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। পরে তাঁরা সামিউলের ৩ দাবির সঙ্গে নতুন ২টি দাবি যোগ করে উপাচার্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। 

উপাচার্য বুধবার ডিসিপ্লিন বোর্ডের সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেন জানালে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন ওই হলের নেতা-কর্মীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বিপ্লব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যেকোনো উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ হলের নয় এমন শতাধিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে চলে যেতে বলা হলে তারা হলের সামনে চলে যান। এরপর শুনেছি আন্দোলনরত ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডার ঘটনার এক পর্যায়ে ঘটনাটি ঘটেছে।'
 
এ ঘটনার সময় ছাত্রলীগের কেউই সেখানে ছিলেন না বলে দাবি তার।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago