খুলনা সিটি নির্বাচন

‘একতরফা’ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চ্যালেঞ্জে আ. লীগ

খুলনা সিটি নির্বাচন
নেতাকর্মীদের নিয়ে খুলনায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের গণসংযোগ। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র নির্বাচনে জয় নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা নেই আওয়ামী লীগের। তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় 'একতরফা' নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে ভোটারদের।

এর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এমনকি ভোটের দিন কেন্দ্রে গেলে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তারা।

অনেকে মনে করছেন, এসব কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মো. আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এসএম শফিকুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এই ৫ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ৩ বার মেয়র পদে নির্বাচন করে ২ বার বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী গত ২ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের ১০ ভাগের একভাগ ভোট পেয়েছিলেন। জাকের পার্টি এবার নতুন মুখ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান গত নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২টি।

'খুলনায় মেয়র পদে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম' উল্লেখ করে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি কুদরত ই খুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপি দেশের প্রধান ২ রাজনৈতিক দলের একটি। তারা নির্বাচনে না থাকায় ভোটাররা আগ্রহ হারিয়েছেন।'

খুলনা সিটি নির্বাচন
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা মহানগরীতে পোস্টার। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'মেয়র নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা নেই বললেই চলে। ভোটের দিন কেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি কম হওয়া আশঙ্কা আছে। তবে পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিতে অনেকে হয়তো কেন্দ্রে যাবেন।'

আওয়ামী লীগের নেতাদেরও অনেকে মনে করছেন যে, ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের ২ নেতা ডেইলি স্টারকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচনের মান কিছুটা ম্লান হয়ে যাবে। তাই উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করা হচ্ছে।

নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়লেই তারা খুশি হবেন বলেও জানান।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল রানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থী বেশি হলে তারাই আওয়ামী লীগের অনুসারী ভোটারদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে ভূমিকা রাখবেন।'

তিনি জানান, ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে আসার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনায় এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যাতে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনী প্রচারণায় আজ শেষ দিনে প্রচুর সংখ্যক নেতাকর্মী সকাল থেকে মাঠে আছেন। রাত ১২টা পর্যন্ত এই প্রচারণা চালানো হবে।'

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখায় কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেশি। তাতে ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে।'

'নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে ভোটদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

সদ্য আজীবনের জন্য বহিষ্কার হওয়া খুলনা নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোটাররা আমাদের ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। মেয়র পদ নিয়ে আগ্রহ না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ভোট দেওয়ার জন্য কেউ দল বিবেচনায় নিচ্ছেন না। ভোটাররা স্থানীয় উন্নয়ন চিন্তা করে কাউন্সিলর বাছাই করবেন। তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন।'

নগরীর বিএনপির 'ভোট ব্যাংক' হিসেবে পরিচিত ৬, ৭, ১২, ১৬, ২২ ও ৩১ নং ওয়ার্ডের অন্তত ১২ ভোটারের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজ সংঘ মাঠ এলাকার জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোট দেওয়ার সুযোগ যখন পেয়েছি তখন অবশ্যই কেন্দ্রে যাব। তবে মেয়র পদে ভোট দেব না।'

৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন রাস্তা এলাকার নাজমুল আজম রাহুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ দেখছি না। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ভোট দিতে যাব। এখনো ঠিক করিনি মেয়র পদে কাকে ভোট দেবো।'

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতীতে অসংখ্যবার প্রমাণ হয়েছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব না। আমাদের নেতাকর্মীদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।'

'ভোটের দিন আমাদের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের আশেপাশে থাকবে। দলের কেউ নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল এবং ভোটে নেতাকর্মীদের অংশ নেওয়া দরকার বলে মনে করে খুলনা বিএনপির অন্য গ্রুপ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপির এক নেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তবে যতই নির্দেশনা আসুক না কেন, অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবে। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করা যায় না।'

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী শেখ মোহাম্মদ নাসির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আলাদা ভোট ব্যাংক আছে। তারা আমাদের ভোট দিতে আসবে। আমরা খুলনার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্ধ পাটকলসহ অন্যান্য কারখানা চালুর ইস্যু নিয়ে ভোট চাচ্ছি। আশা করছি, অনেকেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Mirza Abbas accuses 'a party' of taking 'hadia' from Bashundhara, City Group, others

Mirza Abbas also BNP cannot be removed from public sentiment through "conspiracy"

1h ago