এল নিনোর প্রভাবে দেশে কমছে বৃষ্টিপাত, বাড়ছে তাপদাহ

এল নিনোর প্রভাবে দেশে কমছে বৃষ্টিপাত, বাড়ছে তাপদাহ
তীব্র গরমের কারণে খোলা আকাশের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা। ছবিটি মালিবাগ রেল ক্রসিং এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আনিসুর রহমান

দেশে চলতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) মতে, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ দিন দেশের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে তাপদাহ বয়ে গেছে। ২০১৮ সালে এপ্রিল ও মে মাসে যথাক্রমে ১০ ও ৮ দিন এই তাপদাহ ছিল।

এ বছর এই ২ মাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। গত ৩০ বছর এপ্রিল ও মে মাসে গড়ে যে বৃষ্টি হয়েছে, এ বছরের পরিমাণ তার চেয়ে কম। গত ৩০ বছরের এপ্রিলে গড়ে ১৩৪ মিলিমিটার ও মে মাসে ২৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বিএমডির তথ্য মতে, এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে গত ৩০ বছরের গড়ের তুলনায় যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ ও ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।

বিএমডির আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছরের আবহাওয়া খুবই অস্বাভাবিক। আগের তুলনায় আরও ঘনঘন তাপদাহ দেখা দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাশাপাশি সার্বিকভাবে তাপমাত্রাও বাড়ছে।'

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিক ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অন্তত টানা ৫ দিন কোনো এলাকায় গড় তাপমাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি অব্যাহত থাকলে ওই ঘটনাকে তাপদাহ বলা হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপদাহ ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, তাপদাহের আওতাধীন এলাকা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের নতুন কারণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান বলেন, 'বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উষ্ণতা বাড়ছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ভবিষ্যতে তাপদাহের পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।'

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এপ্রিল ও মে সাধারণত বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস।

গত ১৬ এপ্রিল ঢাকায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ জানান, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের স্তর ঘন হচ্ছে এবং স্থল ও সমুদ্র উভয় ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা বাড়ছে।

'যেহেতু আমরা এল নিনো পর্যায়ে প্রবেশ করছি, শুষ্ক আবহাওয়া আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে। সুতরাং, বাংলাদেশে তাপদাহের তীব্রতা এবং সময়কাল বাড়তে থাকবে। এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে', যোগ করেন তিনি।

এল নিনো বৈশ্বিক জলবায়ুর একটি অবস্থা, যা নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানিকে উষ্ণ করে। এতে বাতাসের আয়নোস্ফিয়ার এবং আশেপাশের জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়ে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago